
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিনের অপসারণ চেয়ে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে এবার বিবৃতি প্রদান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন শিক্ষকরা।
আজ শনিবার (১০ মে) বিকেলে ববি শিক্ষক সমাজের ব্যানারে এ বিবৃতি দেওয়া হয়। ৬৪ জন শিক্ষকের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে শিক্ষকরা উল্লেখ করেছেন, উপচার্যের স্বৈরাচারী ও অপেশাদার আচরণ, দুর্নীতিগ্রস্ততা এবং মারাত্মক অদক্ষতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।
এসময় শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ববিকে রক্ষায় শিক্ষা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন শিক্ষকরা।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ববিতে শিক্ষক সংকট চলমান। উপাচার্য শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরেও গত আট মাসে শিক্ষক নিয়োগ দেননি। এতে শিক্ষাব্যবস্থা মুখথুবরে পরেছে। উল্টো নিয়ম ভেঙে একের পর এক বিভিন্ন গ্রেডে কর্মচারী পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছেন।
এসব অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বেতন-ভাতার কাগজে ট্রেজারার স্বাক্ষর না দেয়ায় উপাচার্য একক স্বাক্ষরে তা প্রদান করছেন। উপাচার্যকে নিয়োগপত্রে সব সময় ক্যাম্পাসে অবস্থান করার কথা বলা হলেও তিনি সপ্তাহে দুই একদিন কয়েকঘণ্টা অবস্থান করেন।
বাকি সময় তিনি ঢাকায় থাকেন। তার অনুপস্থিতিতে উপ-উপাচার্যকেও দায়িত্ব পালন করতে দিচ্ছে না উপাচার্য।
অ্যাকাডেমিক প্রস্তাবসহ বিভিন্ন বিষয়ের কাগজ তার দপ্তরে তিন চার মাস পরে থাকলেও তা দেখার সময় পান না। ফলে সম্প্রতি ক্যান্সার আক্রান্ত ববি শিক্ষার্থী সহায়তার আবেদন করেও না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।
শিক্ষকদের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বর্তমান উপাচার্য যোগদান করার পর ববিতে অর্থ কমিটির বা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটির কোন সভা হয়নি। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ববির বিভিন্ন ভৌত কাজ ও কেনাকাটার জন্য ছয় কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ ছিলো। কিন্তু উপাচার্যের অদক্ষতার কারণে প্রায় ১১ মাসে মাত্র এক কোটি টাকাও ব্যয় করা সম্ভব হয়নি।
শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি তুলে আন্দোলন করলে উপাচার্য তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও সাধারণ ডায়েরী করে স্বৈরাচারী সরকারের মতো নিপিড়নের পথ বেঁছে নিচ্ছেন। তার ফ্যাসিবাদী কাজে ববি দিন দিন অচলাবস্থার দিকে যাচ্ছে। এ উপাচার্য স্বৈরাচার সরকারকে রক্ষায় প্রত্যয় ব্যক্ত করা শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বিভিন্ন লাভজনক পদে নিয়োগ দিচ্ছেন।
অপরদিকে ফ্যাসিবাদী সরকারের ক্ষমতাকালে আওয়ামী শিক্ষকদের পেশাজীবী সংগঠন নীল দলে শত চাঁপের মধ্যেও যারা যোগদান করেননি, তাদের সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে। এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের উপর নির্যাতন ও নিপিড়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিবৃতি দেয়া শিক্ষকদের ‘পতিত সরকারের দোসর’ আখ্যা দিয়ে ববির অ্যাকাডেমিক ও সিন্ডিকেট থেকে বিধিবহিভূত ভাবে অপসারণ করছেন।
উল্লেখ্য, ববি'র চতুর্থ উপাচার্য অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভুইয়া ছাত্র আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট পদত্যাগ করেন। এরপর ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
রাজু