ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সৌদি প্রবাসীদের সাথে মালিকদের নির্মম আচরণ: ফাঁস হয়েছে লোমহর্ষক তথ্য!

প্রকাশিত: ১৬:৫৬, ১৭ মে ২০২৫

সৌদি প্রবাসীদের সাথে মালিকদের নির্মম আচরণ: ফাঁস হয়েছে লোমহর্ষক তথ্য!

ছবি: সংগৃহীত

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) ও ফেয়ার স্কয়ার নামের দুটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার এক যৌথ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সৌদি আরবে নিয়োগকর্তাদের অবহেলা ও অমানবিক আচরণে প্রতিবছর অনেক বাংলাদেশি শ্রমিকের করুণ মৃত্যু ঘটছে। শুধু বাংলাদেশিই নয়, একই পরিণতি হচ্ছে ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসী শ্রমিকদেরও।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রমিকদের মৃত্যু সাধারণত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া, অথবা সড়ক দুর্ঘটনার মতো প্রতিরোধযোগ্য কারণেই ঘটে। কিন্তু নিয়োগকর্তারা সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নেওয়ায় এসব দুর্ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে।

তদন্তে দেখা গেছে, অনেক মৃত্যুর প্রকৃত কারণ গোপন রাখা হয় এবং সেগুলো ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এতে করে নিহত শ্রমিকদের পরিবার সৌদি আইনের অধীনে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ হারিয়ে ফেলে। কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে পরিবারকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়। কাজের সময় দুর্ঘটনায় মারা গেলেও একে 'অকাজজনিত মৃত্যু' বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।

সৌদি আরব বর্তমানে ফিফা বিশ্বকাপ ২০৩৪ আয়োজনের জন্য ব্যাপক নির্মাণকাজে ব্যস্ত। তৈরি হচ্ছে নতুন স্টেডিয়ামসহ বিশাল অবকাঠামো। এই প্রকল্পগুলোতে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক নিযুক্ত থাকবেন, এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ পরিচালক মিনকি ওর্ডেন বলেন, “সৌদি আরব ও ফিফা উভয়ের জন্যই শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি নৈতিক ও আন্তর্জাতিক দায়। এই দায়িত্ব তারা এড়িয়ে যেতে পারে না।”

তিনি আরও বলেন, কাতার ২০২২ বিশ্বকাপে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শ্রমিকদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছিল—যেমন জীবন বীমা, তাপদাহ প্রতিরোধের ব্যবস্থা, ও সুপ্রিম কমিটি গঠন। কিন্তু সৌদি আরব এখনো এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর জোরালো দাবি—বিশ্বকাপের গৌরবের পেছনে যেন আর কোনো শ্রমিকের রক্ত না ঝরে। তারা বলছেন, সৌদি আরবের মতো প্রবাসী শ্রমিকনির্ভর দেশগুলোর উচিত, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও ন্যায্য আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

এই প্রতিবেদন কেবল পরিসংখ্যান নয়, হাজারো পরিবারের কান্না ও ভাঙা স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। সময় এসেছে, এই নিরব মৃত্যুগুলোর দায় নেওয়ার।

ফারুক

×