
ছবিঃ সংগৃহীত
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে এক সময়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মিললে ও বর্তমানে প্রায় পাখি বিলুপ্তির পথে । ঘন বসতি বৃদ্ধি পাওয়া ঝোপ জঙ্গল ও বনবাগান না থাকায় পশু পাখির বাসস্থান ও সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে এখন আকাশে শেষ বিকেলে দেখা মেলে না পাখিদের দল বেঁধে নীড়ে ফেরার দৃশ্য। ডালে ডালে শোনা যায় না ময়না-টিয়ার ডাক। খুনসুটিও নেই চড়ুই, বুলবুলি কিংবা বক, মাছরাঙার। গাছেও নেই তেমন পাখির বাসা।
নাঙ্গলকোটে দিন দিন আশংকাজনক হারে কমছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির সংখ্যা। বিভিন্ন দূষণ, বনাঞ্চল ধ্বংস, জলাশয় ভরাট ও শিকারের ফলে পাখি পরিবর্তন করছে তার আবাসস্থল। এতে হুমকির মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের জীব বৈচিত্র্য। আতশবাজিসহ বিভিন্ন দূষণ, বনাঞ্চল ধ্বংস, শিকারের কারণে দিন দিন কমছে পাখির সংখ্যা। এতে হুমকিতে পড়ছে জীব বৈচিত্র্য।
নাঙ্গলকোট পৌরসভার জেসমিন জাহান জানান, আগের মত পাখির কলকাকলি এখন আর চোখে পড়ে না । সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলে বদ বাদাড়ের পাশে হাটতে গেলেই নানা প্রজাতির পাখির ডাক মন ভরে যেত। এখন এই সব পাখির কলকাকলি শুধুই অতীত। পাখিরা এখন আগের মত আকাশে মেঘ উকি দিলে সারি সারি সাদা বক আকাশে উড়তে দেখা যেত। এখন এই সব কিছু বিলুপ্তির পথে। পরিবর্তন আসছে তাদের আবাসস্থল। এছাড়াও কমেছে গাছপালা। পাখিরা গাছে থাকতে পছন্দ করে। সেখানো বাসা তৈরি করে। কিন্তু যেখানে আগের মত গাছই নেই সেখানে পাখি থাকবে কোথা থেকে।
ধাতিশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, পাখির সাথে আমাদের জীব বৈচিত্র্য জড়িত। পাখি বনাঞ্চল গড়ে তুলতে সাহায্যে করে। সেখানে আমরা অবিচারে পাখি শিকার করছি। পানি দূষণ, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ করে আমরা পাখিদের অস্তিত্ব বিলীন করে দিচ্ছি। কিন্তু এক সময় যখন পাখির অস্তিত্ব থাকবে না তখন এই পৃথিবীরও অস্তিত্ব থাকবে না।
পশু ডাক্তার আবদুল মমিন জানান,কিছু পাখি মৃত পশু পাখির অংশ খেয়ে পরিবেশ সুন্দর রাখে। আগে সকাল হলে ঝাঁকে ঝাঁকে কাক দেখা যেত বাড়ির আঙ্গিনায়। কিন্তু এখন দেখা যায় না। এছাড়াও গবাদি পশুদের শরীরে ব্যথা নাশক ইনজেকশন ব্যবহারের কারণে এসব পশুর মৃতদেহ খেয়ে তিন থেকে চার মিনিটের মধ্যে মারা যায় শকুন। এতেও প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শকুন। আর এসব পাখি ধ্বংসের জন্য আধুনিক মনুষ্য সমাজ দায়ী।
নাঙ্গলকোট বন বিভাগের বন কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, পাখি নিধন ও শিকারের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে। যারা এসবের সাথে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
দেশে পাখির প্রজাতির সংখ্যা ৬৫০টি। এর মধ্যে ৩০টি বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে বিলুপ্ত। অবশিষ্ট ৬২০টি প্রজাতির মধ্যে ৪৭৭ প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে নিয়মিত দেখা যায়, বাকি ১৪৩ প্রজাতি অনিয়মিত দেখা যায়। নিয়মিত ৪৭৭ প্রজাতির মধ্যে ৩০১টি বাংলাদেশের আবাসিক এবং ১৭৬ প্রজাতি পরিযায়ী পাখি। বিলুপ্ত প্রায় পাখি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সম্মিলিত উদ্যোগ নিবে সরকার, এমনটাই দাবী এলাকাবাসীর ।
নোভা