
ছবি: সংগৃহীত
ইউরোপের শেনজেন অঞ্চলের স্বল্পমেয়াদী ভিসা পাওয়ার আশায় ২০২৪ সালে শুধু আফ্রিকান দেশগুলো থেকে যে বিপুলসংখ্যক আবেদন জমা পড়েছে, তার মধ্যে হাজার হাজার আবেদন নাকচ হয়েছে। এতে আবেদনকারীদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬০ মিলিয়ন ইউরো (৬৭.৫ মিলিয়ন ডলার)।
নাইজেরিয়ার ৩২ বছর বয়সী গেমিং কনসালট্যান্ট জোয়েল আন্নায়েগবু স্পেনের বার্সেলোনায় একটি সম্মেলনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বারবার আবেদন করেও স্প্যানিশ দূতাবাসের কাছ থেকে ভিসা পাননি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এমনকি বাড়ির মালিকানার প্রমাণও জমা দিয়েও তিনি ব্যর্থ হন। দূতাবাস জানায়, তার ভ্রমণের উদ্দেশ্য ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’। এতে আন্নায়েগবুর মতো বহু মানুষ চরম অপমানিত বোধ করছেন।
ইউরোপিয়ান কমিশনের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে নাইজেরিয়া থেকে জমা পড়া প্রায় অর্ধেক আবেদনই বাতিল হয়েছে—সংখ্যায় ৫০ হাজার ৩৭৬টি। প্রতিটি ভিসার জন্য ৯০ ইউরো (প্রায় ১০০ ডলার) ফি দিতে হয়, যা ফেরতযোগ্য নয়। শুধু নাইজেরিয়ানরাই হারিয়েছে ৪.৫ মিলিয়ন ইউরোরও বেশি।
লন্ডন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান LAGO Collective বলছে, শেনজেন ভিসা প্রত্যাখ্যানের ফলে শুধু আফ্রিকানরাই নয়, উন্নয়নশীল অনেক দেশই এক ধরনের ‘রিভার্স রেমিট্যান্স’-এর শিকার। অর্থাৎ ধনী দেশের কাছে গরিব দেশের মানুষ ভিসার নামে টাকা দিয়ে আসছে—বিনিময়ে কিছু না পেয়েই।
‘গরিব দেশের নাগরিকদের প্রতি বৈষম্যমূলক মনোভাব’
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা মার্তা ফোরেস্টি বলেন, ‘গরিব দেশ থেকে আবেদন করলেই প্রত্যাখ্যাত হওয়ার হার বেশি। ঘানা, সেনেগাল ও নাইজেরিয়ার মতো দেশগুলোতে এই হার ৪০-৫০% পর্যন্ত। এটি একটি কাঠামোগত বৈষম্যের প্রমাণ।’
ক্যামেরুনের নাগরিক জঁ মবুলে নিজেই ভিসা প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে জয় পান এবং ফরাসি দূতাবাসকে জরিমানা দিতে বাধ্য করেন। তিনি বলেন, ‘তারা বলেছিল আমার কাগজপত্র ভুয়া, অথচ আমি ফ্রান্সে জন্মেছি এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করি।’
ভিসা প্রত্যাখ্যান: শুধু অর্থ নয়, সম্মানহানির শিকারও হচ্ছেন অনেকে
৫৭ বছর বয়সী উগান্ডার প্রকৌশলী জুলিয়াস মুসিমেনতা পরিবারসহ মিউনিখে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং মেলায় অংশ নিতে চেয়েছিলেন। পূর্বে ইউরোপ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থাকলেও পরিবারের ছয় সদস্যই একসাথে ভিসা পাননি। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের সবসময় নেতিবাচকভাবে দেখে।’
যুক্তরাজ্যের ভিসা ফি আরও বেশি, প্রত্যাখ্যানের হারও উদ্বেগজনক
শুধু শেনজেন নয়, যুক্তরাজ্যেও একই সমস্যা। ২০২৪ সালে ইউকে ভিসার ফি বাড়ানো হয়েছে ১০০ পাউন্ড থেকে ১২৭ পাউন্ড পর্যন্ত। প্রত্যাখ্যাত ভিসার আর্থিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০.৭ মিলিয়ন পাউন্ড। শুধু নাইজেরিয়ানরাই হারিয়েছে অতিরিক্ত ২ মিলিয়ন পাউন্ড।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভিসা প্রক্রিয়ার এই কাঠামোগত বৈষম্য শুধুমাত্র ব্যক্তির ক্ষতিই নয়, এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এক প্রকার অর্থনৈতিক নিষ্পেষণ।
সূত্র: সিএনএন।
রাকিব