
ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ
ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ডাক্তার বাড়ির সন্তান মোঃ শামীম হায়দার। একসময় বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকতা ছেড়ে শখের বশে কলা চাষ শুরু করে আজ তিনি একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তার উদ্যোগ শুধু তাকেই স্বাবলম্বী করেনি, এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করেছে।
বিএ/বিএসএস পাস করার পর শামীম হায়দার একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করছিলেন। কিন্তু নিজের কিছু করার অদম্য ইচ্ছা এবং কৃষির প্রতি ভালোবাসার টানে ২০০৮ সালে মাত্র ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে তিনি দেশীয় প্রজাতির কলা চাষ শুরু করেন। বর্তমানে, রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া গ্রামে তার "বড়ইয়া কৃষি খামার" নামক কৃষি প্রকল্পে ১ একর ২৬ শতাংশ পতিত জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির কলার চাষ হচ্ছে। এই খামার থেকে বার্ষিক প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা আয় করছেন শামীম, যা তাকে একজন দক্ষ কৃষি খামারি ও সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
কলার উপকারিতা সম্পর্কে শামীম বলেন, "মানুষের দেহে ক্যালরির চাহিদা মেটাতে ফলের মধ্যে কলার বিকল্প নেই। কলায় প্রায় ১০০ ক্যালরি থাকে। এছাড়াও কলায় রয়েছে খনিজ পদার্থ, ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
শামীমের এই সফলতার পেছনে রাজাপুর উপজেলা কৃষি অফিসের অবদান অনস্বীকার্য। উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে কৃষি অফিসার শাহিদা শারমিন আফরোজের নজরে আসেন শামীম। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তিনি সকল প্রকার পরামর্শসহ সরকারি সুবিধাদি পাচ্ছেন। এমনকি বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দক্ষ কৃষক হিসেবে কৃষক কার্ড ও প্রত্যয়ন পত্রও পেয়েছেন।
শামীম বর্তমানে তার প্রকল্পের পরিধি আরও বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করছেন। তিনি জানান, "বর্তমানে কৃষি পণ্য উৎপাদনে খরচ অস্বাভাবিক। সেজন্য দরকার সেচ পাম্প, সার-ঔষধ, উন্নত জাতের চারা ও পরিচর্যা। সেক্ষেত্রে সরকারি বা বেসরকারি প্রণোদনা বা আর্থিকসহ উপকরণ সহায়তা পেলে আরও বেশি উৎপাদন করতে পারব বলে আশা রাখি।"
স্থানীয়দের মতে, শামীম একজন সফল কলা চাষি এবং একজন ভালো মনের মানুষ। তারা কৃষি অফিসের কাছে শামীমকে আরও বেশি সহায়তা করার জোর দাবি জানিয়েছেন, যাতে তিনি এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন।
উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ মেহেদী হাসান শামীম হায়দারের কলা বাগান একাধিকবার পরিদর্শন করেছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি শামীমকে একজন দক্ষ ও ভালো চাষি হিসেবে অভিহিত করে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেছেন।
শামীম হায়দারের এই সাফল্য প্রমাণ করে যে, সঠিক পরিকল্পনা, কঠোর পরিশ্রম এবং সরকারি সহায়তা পেলে যে কেউ একজন সফল উদ্যোক্তা হতে পারে।
নোভা