
পরীক্ষার প্রস্তুতি কেবল পাঠ্যবই মুখস্থ করার বিষয় নয়,এটি মনোসংযোগ, শৃঙ্খলা ও মানসিক দৃঢ়তার এক কঠিন পরীক্ষা। সিলেবাস আয়ত্ত করা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, আপনার মনোযোগ ধরে রাখার সক্ষমতাই হতে পারে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। যদি বারবার মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন বা ছোট ছোট বিষয়েও মন বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে, তবে কিছু নির্দিষ্ট কৌশল মেনে চললে বদলে যেতে পারে আপনার পড়াশোনার ধরণ। মনোযোগ বাড়ানো এবং আত্মবিশ্বাস জোগানোর জন্য নিচের এই ১০টি কৌশল আপনাকে প্রস্তুতির এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।
সময়সূচিভিত্তিক পড়াশোনা শুরু করুন
একটি বিস্তারিত সময়সূচি তৈরি করুন, যেখানে প্রতিটি বিষয় বা অধ্যায়ের জন্য নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ থাকবে। কঠিন ও সহজ অংশগুলো সাপ্তাহিকভাবে ভারসাম্য রেখে ভাগ করে নিন। এতে আপনি শেষ মুহূর্তের তাড়াহুড়া এড়িয়ে ধাপে ধাপে প্রস্তুতি নিতে পারবেন এবং মানসিক চাপও কমে আসবে।
পোমোডোরো টেকনিক ব্যবহার করুন
২৫ মিনিট মনোযোগসহকারে পড়াশোনা করার পর ৫ মিনিটের বিরতি নিন। এভাবে চারটি সাইকেল শেষ হলে ১৫-৩০ মিনিটের দীর্ঘ বিরতি নিন। এই কৌশল আপনার মস্তিষ্ককে চাপে না ফেলে সক্রিয় রাখে, মনোযোগ বাড়ায় এবং দীর্ঘসময় পড়ালেখায় ক্লান্তি এড়াতে সাহায্য করে।
পড়ার পরিবেশ গুছিয়ে নিন
একটি নির্দিষ্ট, ঝামেলামুক্ত পড়ার জায়গা নির্ধারণ করুন। যথেষ্ট আলো এবং আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। আশপাশের মানুষকে জানিয়ে দিন যেন তারা আপনার পড়ার সময় বিরক্ত না করেন। পরিপাটি ও শান্ত পরিবেশ মনকে সহজে পড়ায় মনোযোগী করে তোলে।
প্রযুক্তিগত বিভ্রান্তি কমান
পড়ার সময় ফোনের নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন অথবা সোশ্যাল মিডিয়া ও বিনোদনের অ্যাপগুলোর ব্যবহার ঠেকাতে ব্লকার অ্যাপ ব্যবহার করুন। ফোন হাতের বাইরে রাখার অভ্যাস করুন। ডিজিটাল বিভ্রান্তি কমালে মনোযোগ স্থায়ী হয় এবং পাঠ্যবিষয়ের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত থাকা সম্ভব হয়।
সক্রিয় শেখার কৌশল প্রয়োগ করুন
তথ্য নিজের ভাষায় সংক্ষেপে লিখুন, মুখে বলুন বা কনসেপ্টগুলো বোঝাতে নিজেকে শিক্ষক ভেবে উপস্থাপন করুন। মানচিত্র বা ফ্ল্যাশকার্ডের মতো ভিজ্যুয়াল টুল ব্যবহার করুন। এসব পদ্ধতিতে মস্তিষ্ক বেশি সক্রিয় হয় এবং তথ্য দীর্ঘমেয়াদে মনে থাকে।
দেহ ও মনের যত্ন নিন
নিয়মিত শরীরচর্চা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়। পুষ্টিকর খাবার খান, বিশেষ করে সেসব যা মস্তিষ্কের সুস্থতায় সহায়ক। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন।ঘুম মনোযোগ বাড়াতে এবং শেখা তথ্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মেডিটেশন ও মাইন্ডফুলনেস চর্চা করুন
প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট করে ধ্যান বা মাইন্ডফুলনেসের সময় রাখুন। এসব অভ্যাস মনকে বর্তমানের সঙ্গে যুক্ত রাখতে সহায়তা করে, মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং পরীক্ষার উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
স্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
প্রতিটি পড়ার সেশনের জন্য একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।যেমন, একটি অধ্যায় শেষ করা বা নির্দিষ্ট সংখ্যক সমস্যার সমাধান। ছোট ছোট লক্ষ্য বড় প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কাজ করে এবং আপনি পড়ায় কতদূর অগ্রসর হচ্ছেন তা বুঝতে সাহায্য করে।
ভিজ্যুয়াল ও অডিও সাহায্য নিন
শুধু বইয়ের পড়া নয়, ভিডিও লেকচার, শিক্ষামূলক পডকাস্ট বা ইনফোগ্রাফিকের সাহায্য নিন। একাধিক ইন্দ্রিয় সক্রিয় হলে জটিল বিষয়ও সহজে বোঝা যায় এবং পড়ায় আগ্রহ বাড়ে।
গুণগত মানসম্পন্ন বিরতির অভ্যাস গড়ে তুলুন
পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ছোট বিরতি নিন।হালকা স্ট্রেচিং, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা ছোট করে হাঁটা যেতে পারে এই সময়ের কাজে। মানসম্পন্ন বিরতি মানসিক ক্লান্তি দূর করে এবং মনকে পুনরায় প্রস্তুত করে তোলে।
প্রস্তুতিতে মনোযোগই আপনার শ্রেষ্ঠ অস্ত্র
পরীক্ষার আগে যতটা সময় আপনি পড়াশোনায় ব্যয় করছেন, তার কার্যকারিতা নির্ভর করছে আপনার মনোযোগের ওপর। তাই এই ১০টি কার্যকরী কৌশল অনুসরণ করে আপনার প্রস্তুতিকে আরও দৃঢ়, সুশৃঙ্খল এবং ফলপ্রসূ করে তুলুন। পরীক্ষার দিন যেন হয় আত্মবিশ্বাসে ভরপুর।এই লক্ষ্যেই আজ থেকেই শুরু হোক আপনার মনোযোগ বৃদ্ধির যাত্রা।
সূত্র:https://tinyurl.com/bdh56296
আফরোজা