ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ছেলের রাজনৈতিক মন্তব্যের জেরে অপপ্রচারের শিকার মা

প্রকাশিত: ০৪:১১, ২২ মে ২০২৫

ছেলের রাজনৈতিক মন্তব্যের জেরে অপপ্রচারের শিকার মা

ছবি: সংগৃহীত

ছেলের বিতর্কিত রাজনৈতিক মন্তব্যের জেরে চরম অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন এক নারী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ওই নারীর ছবি ও ভিডিওর নামে ভুয়া ও বিকৃত কনটেন্ট। ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার জানায়, এসব ভিডিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

১৫ মে রাতে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের পিতা, মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হকের মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) সহ-মুখপাত্র ফারদিন হাসান। পরদিন (১৬ মে) দুপুরে তিনি নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে লেখেন, ‘সাদ্দামের বাবা মারা গেসে নিউজটা অসত্য। এদের সবার বাপ তো মারা গেসে সেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট।’

ফারদিনের এই মন্তব্যের পর থেকেই ফেসবুকে শুরু হয় নানা বিতর্ক ও বিদ্বেষমূলক প্রতিক্রিয়া। তার পোস্টের নিচেই একাধিক আওয়ামী লীগপন্থী ফেসবুক প্রোফাইল থেকে তার মা এবং পরিবারের নারী সদস্যদের উদ্দেশে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয়।

১৬ মে বিকেলেই ফেসবুকে ‘আমি ফারদিন, আমি আমার মা বোনকে বিক্রি করে এমবি কিনে ফেসবুক চালাই’ নামের একটি পেজ সক্রিয় হয়। পেজটি ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি ‘উর্দু কোচিং সেন্টার, বাংলাদেশ শাখা’ নামে খোলা হলেও ফারদিনের পোস্টের পরই নাম পরিবর্তন করে অপপ্রচার চালানো শুরু করে।

পেজটির প্রোফাইল ও কভার ফটোতেও ব্যবহার করা হয় ফারদিন ও তার মায়ের ছবি। এরপর শুরু হয় একের পর এক বিকৃত, মানহানিকর পোস্টযেখানে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা ছবি ও ভিডিও প্রচার করা হয়।

১৬ মে রাতেই পেজটি একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে দাবি করা হয় এটি ফারদিন ও তার মায়ের চুম্বনের দৃশ্য। তবে বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভিডিওটি এআই ব্যবহার করে তৈরি। হাতের আঙুলের গঠন, মুখের নড়াচড়া এবং কাপড়ের ভঙ্গিমায় অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়েছে।

প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে ডিপফেক প্রমাণ

‘ডিপফেক-ও-মিটার’ টুল দিয়ে ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এতে ৯৯ শতাংশ এআই ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি ভিডিওটি অন্যান্য ফেসবুক পেজ ও ব্যক্তিগত প্রোফাইলেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

রিউমর স্ক্যানার জানায়, এই ভিডিওটি একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে পোস্ট করার পর ১০ হাজারের বেশি প্রতিক্রিয়া আসে এবং এটি দেখা হয় প্রায় ৮ লাখ ৫২ হাজার বার।

এ ছাড়া, ফারদিনের মায়ের নাম করে আরও বেশ কয়েকটি ছবি পোস্ট করা হয়, যেগুলোও এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি এবং ফেস-সোয়াপ পদ্ধতিতে সম্পাদিত বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেনডিপফেক ও এআই-নির্ভর প্রযুক্তির অপব্যবহার করে নারীদের লক্ষ্য করে হেনস্তা এখন একটি ভয়াবহ বাস্তবতা।

রিউমর স্ক্যানারের প্রতিবেদনে বলা হয়, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং ফারদিনের রাজনৈতিক অবস্থানকে কেন্দ্র করে তার মাকে নিশানা করে পরিচালিত একটি পরিকল্পিত অপপ্রচারের অংশ।

উল্লেখ্য, এর আগেও ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে লালমনিরহাটে এআই প্রযুক্তিতে তৈরি একটি ভুয়া ভিডিওর কারণে আত্মহত্যা করেন এক নববধূ।

 

সূত্র: রিউমর স্ক্যানার।

 

রাকিব

×