
বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে হৃদরোগই এখন শীর্ষে। তবে নিয়মিত ও পরিমিত হাঁটার অভ্যাস এই বিপদ অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে বলে জানাচ্ছেন গবেষকেরা।একদল মার্কিন গবেষক জানাচ্ছেন, একটি সহজ হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুললেই এই মারাত্মক ঝুঁকি থেকে নিজেকে অনেকটা সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।
নিউ ইয়র্কের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক-এর বিংহ্যামটন ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাঝারি মাত্রায় নিয়মিত হাঁটা স্বল্প সময়ের মধ্যেই হৃদ্রোগের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ উপসর্গ হ্রাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক পামেলা স্টুয়ার্ট ফাহস বলেন, আমরা জানি হাঁটা একটি কার্যকর ব্যায়াম, তবে এটি শরীরের ভেতরের জৈবিক উপাদান যেমন কোলেস্টেরল, রক্তচাপ বা ওজনের ওপর কতটা প্রভাব ফেলে,তা নিয়ে আগে মিশ্র ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল। তাই এই গবেষণায় সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়।
এই গবেষণার আওতায় ৭০ জন নারীকে নিয়ে একটি ১০ সপ্তাহের হাঁটা কার্যক্রম পরিচালিত হয় অংশগ্রহণকারীদের প্রতিদিন জেগে থাকা সময়জুড়ে একটি প্রোগ্রামেবল পেডোমিটার পরতে বলা হয় এবং সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট দ্রুত হাঁটার অনুরোধ জানানো হয়। প্রাথমিক পরীক্ষার জন্য তাদের শরীরসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয় এবং একটি অনলাইন ঝুঁকি নিরূপণ পদ্ধতির মাধ্যমে আগামী ১০ বছরে হৃদ্রোগের আশঙ্কা নির্ধারণ করা হয়।
পাঁচ সপ্তাহ পর, অংশগ্রহণকারীদের একটি আলোচনায় ডেকে পাঠানো হয়, যেখানে তাদের হাঁটার ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখানো হয় এবং আরও কীভাবে অ্যারোবিক হাঁটা বাড়ানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়। তাদের দৈনিক অ্যারোবিক হাঁটার গড় পরিমাণ অন্তত ১০ শতাংশ বাড়ানোর একটি চ্যালেঞ্জও দেওয়া হয়, যাতে তারা গবেষণা শেষে পর্যন্ত আগ্রহ ধরে রাখেন।
১০ সপ্তাহের কার্যক্রম শেষে অংশগ্রহণকারীদের ওজন, বিএমআই, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল পরিমাপ করা হয়। একই সঙ্গে তারা নিজেরা কেমন শরীরচর্চা করেছেন, কী ধরনের খাবার খেয়েছেন, কেমন জীবনযাপন করেছেন, সে সম্পর্কেও একটি প্রশ্নাবলী পূরণ করেন। ফলাফলে দেখা যায়, হাঁটা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু জৈবিক ঝুঁকি সূচকে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। গবেষক দলের প্রাথমিক ধারণাই এতে প্রমাণিত হয়।
অধ্যাপক ফাহস বলেন, হাঁটার কার্যক্রমে চ্যালেঞ্জ যোগ করা হলে অংশগ্রহণকারীদের উৎসাহ যেমন বাড়ে, তেমনি ফলাফলও আরও উন্নত হয়। ভবিষ্যতে এই পদ্ধতি দীর্ঘ মেয়াদি ও বড় পরিসরে পরীক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া গবেষণাটি যেহেতু গ্রামীণ নারীদের নিয়ে পরিচালিত হয়েছে, তাই এটি অন্যান্য গ্রামীণ অঞ্চলেও পুনরাবৃত্তি করা সম্ভব বলে জানান গবেষকরা।
গবেষণা দলে আরও ছিলেন বিংহ্যামটন ইউনিভার্সিটির ডেকার স্কুল অব নার্সিং-এর পিএইচডি শিক্ষার্থী এলিজাবেথ মারিগ্লিয়ানো এবং SUNY Delhi-র নার্সিং স্কুলের উপদেষ্টা ক্রিস্টিনা লুডডেন। গবেষকেরা ভবিষ্যতে আরও বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী নিয়ে এই ধরনের গবেষণা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
এই গবেষণার মাধ্যমে আরও একবার প্রমাণিত হলো হার্ট সুস্থ রাখতে জটিল কিছু নয়, বরং প্রতিদিন নিয়মিত কিছুটা হাঁটাই হতে পারে সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায়।
সূত্র:https://tinyurl.com/2uxsdv4c
আফরোজা