ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পঞ্চগড়ে মাদ্রাসা ছাত্রীর  রহস্যজনক মৃত্যু!

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড়।

প্রকাশিত: ২০:১৭, ২২ মে ২০২৫

পঞ্চগড়ে মাদ্রাসা ছাত্রীর  রহস্যজনক মৃত্যু!

পঞ্চগড় সদর উপজেলার পানিমাছপুকুরি এলাকার নূরে আলম সিদ্দিকের কন্যা সুমনা (১৩), তাওহীদ মডেল মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্রী, রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেছে। গত ১৮ মে বিকেলে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে সদর আধুনিক হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সুমনার পরিবারের অভিযোগ, এই মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। নিহতের বড় বোন আমেনা খাতুন বলেন, কিছুদিন আগে সুমনা কান্নাকাটি করে তার পা জড়িয়ে ধরেছিল এবং বলেছিল, “আমাকে আর ওখানে পাঠিও না। ওরা আমাকে পড়াশোনার সুযোগ দেয় না, শুধু কাজ করায়। আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছি। ওরা আমাকে বাঁচতে দেবে না।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, মাদ্রাসার মুহতামিমের পুত্রবধূ সুমনাকে দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করাতেন এবং তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতেন।

নিহতের আরেক বোন জান্নাতুল ফেরদৌস জুলি বলেন, “আমার বোন পুরোপুরি সুস্থ ছিল। মাত্র দু’বার বমি করলে কেউ কি মারা যায়? মরদেহ ছুঁয়ে মনে হচ্ছিল, সে কয়েক ঘণ্টা আগেই মারা গেছে। এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। আমি এর সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার চাই।”

সুমনার বাবা নূরে আলম সিদ্দিক জানান, “মাদ্রাসা থেকে ফোন করে বলা হয়, মেয়েটি গুরুতর অসুস্থ। আমরা মাদ্রাসায় গিয়ে দেখি, সে সেখানে নেই। পরে জানানো হয়, তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখি, সে মৃত। আমাদের বলা হয়, একটি অঙ্গীকারনামায় সই করতে হবে, তবেই মরদেহ নিতে পারব। কিছু না বুঝেই আমি সই করি।”

সুমনার মা জানান, “মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আমাকে বুঝিয়ে বলে, হাফেজা মেয়ের শরীরে কাটাছেঁড়া ঠিক নয়, পরপুরুষ যেন না দেখে। সেই ভয়েই আমি ময়নাতদন্তের দাবি থেকে সরে আসি।”

সুমনার দুলাভাই শান্ত বলেন, “মাদ্রাসার সহ-সভাপতি আবুল বাশার নিজেকে জিনাত লাইফস্টাইল ও স্যামসাং শোরুমের মালিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে আমাদের ব্রেনওয়াশ করেন। বলেন, ময়নাতদন্ত হলে সুইপার মেয়েটির দেহ উলঙ্গ করে নাড়াচাড়া করবে।”

অন্যদিকে, মাদ্রাসার মুহতামিম লাকি নাহার বলেন, “সুমনা সাত বছর ধরে এখানে ছিল। খুব ভদ্র ও ভালো মেয়ে ছিল। মাগরিবের নামাজের সময় কেউ জানায় সে তিনবার বমি করেছে। তখন চিনি খাওয়াই দিয়ে সাতটা সাত মিনিটে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সাতটা তেরোতে আমরা পৌঁছাই। চিকিৎসক তখন তার অভিভাবকের খোঁজ করেন, আমি সঙ্গে সঙ্গে তাদের খবর দিই।”

এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর থানার ওসি (তদন্ত) এইচ এস এম সোহরাওয়ার্দী বলেন, “পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহটি আইনানুগভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে।”

তবে স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্র বলছে, সুমনার মৃত্যুর পেছনে চাপা পড়া কোনো নির্মম বাস্তবতা রয়েছে, যা অজানাই থেকে যাচ্ছে।

সায়মা

সম্পর্কিত বিষয়:

×