ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ট্রাম্পের জন্য কাতারের উপহার বিমান গ্রহণ করলো পেন্টাগন

প্রকাশিত: ১১:১৩, ২২ মে ২০২৫

ট্রাম্পের জন্য কাতারের উপহার বিমান গ্রহণ করলো পেন্টাগন

ওয়াশিংটন, ২২ মে: সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যবহারের জন্য কাতার সরকার থেকে একটি বোয়িং ৭৪৭ বিমান গ্রহণ করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর (পেন্টাগন)। তবে বিমানটি এখনই ব্যবহারের উপযোগী নয়,এটিকে ‘নিরাপত্তা ও মিশন-সম্পর্কিত প্রয়োজনীয়তা’ অনুযায়ী রূপান্তর করতে হবে, জানিয়েছে পেন্টাগন।

প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র শন পারনেল জানান, “যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের ফেডারেল আইন ও বিধিমালা অনুসরণ করেই কাতার থেকে বোয়িং ৭৪৭ গ্রহণ করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।” তিনি আরও বলেন, “এই বিমানটি যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পরিবহনে ব্যবহৃত হবে, তাই প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো নিশ্চিত করার জন্য কাজ করবে প্রতিরক্ষা বিভাগ।”

তবে সংশ্লিষ্ট আলোচনার সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, চুক্তিটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি এবং কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের আইনি টিমগুলোর মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, পেন্টাগনের মুখপাত্র এই প্রশ্নের জবাব দেননি যে, যুক্তরাষ্ট্র এই বিমানের জন্য কোনো অর্থ পরিশোধ করেছে কি না। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তারা কাতারের ওয়াশিংটন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

এ নিয়ে বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “কাতার আমাদের বিমান বাহিনীকে একটি জেট উপহার দিয়েছে, এবং এটা খুবই দারুণ একটি বিষয়।”

এর আগে সোমবার কাতারের প্রধানমন্ত্রী ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এই বিমান সংক্রান্ত বিষয়টি আমাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও বৈধতার ভিত্তিতে সম্পাদিত হয়েছে। এটি আমাদের দুই দেশের দীর্ঘদিনের সহযোগিতারই একটি অংশ।”

এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী সচিব ট্রয় মেইঙ্ক ও চিফ অব স্টাফ ডেভিড অ্যালভিন জানান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বিমানটির সংস্কারের পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। বিমান বাহিনীর একজন মুখপাত্র সিএনএনকে বলেন, “প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী বোয়িং ৭৪৭ বিমানটি কার্যনির্বাহী যাতায়াতের জন্য প্রস্তুত করতে চুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিমান বাহিনী। তবে এই চুক্তির বিস্তারিত তথ্য শ্রেণিবদ্ধ (classified)।”

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও শুরু হয়েছে। ডেমোক্র্যাটিক নেতারা তো বটেই, এমনকি ট্রাম্পপন্থী কিছু রিপাবলিকান নেতাও এই উদ্যোগের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ ট্রাম্প নিজেই এই বিমানটিকে ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’-এর বিকল্প হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ এটিকে কাতারের ‘বিনামূল্যে উপহার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তবে সিএনএনের তদন্তে উঠে এসেছে, মূলত ট্রাম্প প্রশাসনই কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বোয়িং ৭৪৭ পাওয়ার বিষয়ে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর বিমানবাহিনী বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে, প্রেসিডেন্টের ব্যবহারের জন্য তৈরি করা নতুন জেটগুলো ডেলিভারি হতে আরও দুই বছর সময় লাগবে।

তখনই দ্রুত বিকল্প খুঁজতে থাকে ট্রাম্প প্রশাসন। মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সম্ভাব্য বিমান তালিকা তৈরির। এরপর বোয়িং মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের জানায়, বিশ্বের কয়েকটি ক্লায়েন্টের হাতে থাকা বিমানের মধ্যে কাতারের বিমানের অবস্থা তুলনামূলক ভালো।

এই তথ্য জানার পর হোয়াইট হাউসের সমর্থনে কাতারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে পেন্টাগন। যদিও প্রথমদিকে প্রতিরক্ষা দপ্তরের ধারণা ছিল, কাতারের কাছ থেকে বিমানটি কেনা হবে,উপহার হিসেবে নয়।

এদিকে কূটনৈতিক, নৈতিক এবং আইনি দিক ছাড়াও এ ধরনের বিমানে আধুনিক নিরাপত্তা ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বসানো অত্যন্ত জটিল ও ব্যয়বহুল একটি প্রক্রিয়া। বর্তমান এবং সাবেক মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, পুরো বিমানটি প্রায় খুলে ফেলে নতুন করে গঠন করতে হবে, যা সম্পন্ন করতে সময় লাগবে প্রায় দুই বছর এবং এতে ব্যয় হতে পারে বিমানটির বর্তমান মূল্য অপেক্ষাও কয়েকগুণ বেশি।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/54wvzc6s

আফরোজা

×