ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অ্যাপলের ব্রেন-কম্পিউটার প্রযুক্তি: স্পর্শ নয়, টাইপ নয়, ভয়েস নয়—এবার শুধু ভাবলেই চলবে আইফোন!

প্রকাশিত: ০০:৫৬, ২২ মে ২০২৫; আপডেট: ০০:৫৭, ২২ মে ২০২৫

অ্যাপলের ব্রেন-কম্পিউটার প্রযুক্তি: স্পর্শ নয়, টাইপ নয়, ভয়েস নয়—এবার শুধু ভাবলেই চলবে আইফোন!

ছবিঃ সংগৃহীত

স্পর্শ, টাইপ কিংবা ভয়েস কমান্ডের যুগ শেষ হতে চলেছে। এবার শুধু ভাবলেই কাজ করবে আপনার আইফোন!

অ্যাপলের ভবিষ্যতের পরিকল্পনা শুনে আপনি হয়তো হতবাক হবেন। এয়ারপড মনে হচ্ছে আধুনিক? এখন সেটাও পুরোনো হতে চলেছে। কারণ অ্যাপল এমন একটি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে, যেখানে কোনো স্পর্শ, ভাষা বা স্ক্রিন টাচের প্রয়োজনই নেই—শুধু ভাবলেই কাজ করবে আপনার ডিভাইস।

এই নতুন প্রযুক্তির নাম Brain-Computer Interface (BCI)। আর এতে অ্যাপল অংশীদার হয়েছে নিউরোটেক কোম্পানি Synchron-এর সঙ্গে, যারা সরাসরি মস্তিষ্কের ইলেকট্রিক সিগন্যাল থেকে কমান্ড নিয়ে ডিভাইস চালাতে সক্ষম একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছে।

🧠 ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (BCI) কী?

BCI হলো এমন একটি প্রযুক্তি যা মানুষের মস্তিষ্ক থেকে আসা বৈদ্যুতিক তরঙ্গ শনাক্ত করে তা ডিজিটাল কমান্ডে রূপান্তর করে। আপনি যদি মাউস চালানো, অ্যাপ খোলা বা ভিডিও কল শুরু করার কথা কেবল ভাবেন—তবেই সেই কাজটা হবে।

অ্যাপলের এই প্রকল্পে ব্যবহৃত ডিভাইসটির নাম Stentrode, যা Synchron তৈরি করেছে। এটি একপ্রকার ইমপ্লান্ট যা মস্তিষ্কের মোটর কর্টেক্সের পাশে শিরার মাধ্যমে স্থাপন করা হয়—তাতে খুলি কাটারও দরকার পড়ে না! (এটাই সম্ভবত এলন মাস্কের Neuralink থেকে এগিয়ে, যেটিতে খুলির অস্ত্রোপচার প্রয়োজন।)

🧬 Synchron: এই প্রযুক্তির নায়ক

Synchron ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ডঃ থমাস অক্সলি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। কোম্পানিটি মূলত এমন মানুষদের জন্য কাজ করছে যারা ALS বা স্পাইনাল কর্ড ইনজুরির মতো সমস্যায় ভুগে ডিভাইস নিয়ন্ত্রণে অক্ষম। এই প্রযুক্তি তাঁদের আবার ডিজিটাল জগতে নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দিচ্ছে।

এই প্রতিষ্ঠান শুধু মানবিক উদ্দেশ্যে থেমে থাকেনি—তাদের ইনভেস্টর লিস্টে আছেন জেফ বেজোস, বিল গেটস, খোসলা ভেঞ্চারস এবং এখন অ্যাপলও। প্রযুক্তির সুপারহিরোদের একটি ‘জাস্টিস লীগ’ যেন তৈরি হয়েছে, যারা আপনার মনের কথা ব্লুটুথের মাধ্যমে পাঠাতে চাইছে!

🧪 এই প্রযুক্তি দিয়ে কী করা যায়?

এক পরীক্ষায়, ALS আক্রান্ত মার্ক জ্যাকসন নামের এক ব্যক্তি Stentrode-এর মাধ্যমে অ্যাপলের Vision Pro হেডসেট নিয়ন্ত্রণ করেন। কথা বলা বা হাত নাড়ানোর প্রয়োজন ছাড়াই তিনি ভার্চুয়াল ইন্টারফেস ঘুরে দেখেন এবং মনের শক্তিতেই এক ‘মেন্টাল ভ্যাকেশন’ নেন সুইস আল্পসে।

এই প্রযুক্তি আইপ্যাডসহ অন্যান্য অ্যাপল ডিভাইসেও কাজ করে। যদিও স্পিড এখনো সীমিত (মানে, আপনি এখনও “Call of Duty” ভাবনায় খেলতে পারবেন না), তবে এটি যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য। অ্যাপ খোলা, কার্সর চালানো ও যোগাযোগ—সবই সম্ভব।

অ্যাপলের ইঞ্জিনিয়াররা সরাসরি কাজ করছেন এটি iOS এবং visionOS-এর সাথে ইন্টিগ্রেট করার জন্য। শুধু ফটো তোলার ফর্মাল হাসি নয়—এটা সত্যিকার অংশীদারিত্ব। ভবিষ্যতে এটি শুধু অ্যাক্সেসিবিলিটির টুল না হয়ে অ্যাপলের মূল ইকোসিস্টেমের অংশ হয়ে উঠতে পারে—AirTags বা ইমোজির মতো।

🔮 এটাই কি প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ?

যদিও এখনও শুরু পর্যায়ে রয়েছে, এবং এটি মূলত বিশেষভাবে অক্ষমদের জন্য বেশি কার্যকর, তবে ভবিষ্যতে এর ব্যবহার আরও বিস্তৃত হতে পারে। তবে এখনো FDA-এর পূর্ণ অনুমোদন পায়নি এবং এ ধরনের ইমপ্লান্ট চালু করা খুব সহজ নয়।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো নিউরাল ডেটার মালিক কে? আপনি যদি ভুল করে কিছু খারাপ চিন্তা করেন? কিংবা অ্যাপলের পরবর্তী বাগ ফিক্স যদি আপনার মস্তিষ্ককে টিকটকে স্ক্রল করার জন্য প্রোগ্রাম করে দেয়?

তবে বাস্তবতা হলো—অ্যাপল যদি কোনও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করে, তাহলে সেটি একদিন সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে যায়। যেমন হয়েছে Face ID, Apple Pay, বা Vision Pro-এর ক্ষেত্রে।

📱 শেষ কথা

এখন আমরা এমন এক যুগের দরজায় দাঁড়িয়ে, যেখানে হয়তো ভবিষ্যতের আইফোন চালু করতে শুধু ভাবনাই যথেষ্ট হবে।

এখনো অবিশ্বাস্য লাগছে? একসময় তো স্পর্শ করে ফোন চালানো বা ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহারের ধারণাও অবাস্তবই ছিল।

সূত্রঃ https://eladelantado.com/news/apple-brain-interface-replaces-devices/#google_vignette

ইমরান

×