ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পাট দিয়ে তৈরি যুদ্ধযান নিয়ে রাস্তায় যুবক বুলবুল

আবুল হাসনাত, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ১৯:১৫, ২১ মে ২০২৫

পাট দিয়ে তৈরি যুদ্ধযান নিয়ে রাস্তায় যুবক বুলবুল

ছবি: জনকণ্ঠ

বলা হয়ে থাকে—প্রযুক্তি বড় বিষয়ের না, বড় বিষয় হলো মানুষটির মনের জোর। সেটিই যেন আবারও প্রমাণ করলেন চট্টগ্রামের এক সাধারণ তরুণ, যার নাম বুলবুল।

মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পাস, বয়স ২৭, কিন্তু চিন্তাশক্তি ও সৃজনশীলতায় তিনি বহু প্রকৌশলী বা ডিজাইনারকেও চমকে দিতে পারেন। পাট দিয়ে তিনি বানিয়ে ফেলেছেন এমন একটি যান, যা দেখলে কারো চোখ ফেরানো কঠিন।

গাড়িটির নাম C.019। এটি বুলবুলের নিজের দেওয়া নাম। কারণ—এটি তাঁর উনিশতম উদ্ভাবন। এর আগে তিনি বানিয়েছেন প্রতিবন্ধী ও চলাচলে অক্ষম মানুষের জন্য ১৮টি বিশেষ যান। সবই নিজের হাতে, নিজের মাথায় তৈরি, কোনও প্রাতিষ্ঠানিক কারিগরি শিক্ষা ছাড়াই।

পাট দিয়েই কাঠামো এই নতুন যানটি দেখতে অনেকটা যুদ্ধের ট্যাংকের মতো। বডি গঠন করা হয়েছে প্রধানত পাট দিয়ে। দেশের নিজস্ব কাঁচামাল ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে বাহ্যিক কাঠামো, যা আবার হালকা, টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব। এর গায়ে বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে—“Made in Bangladesh”।

এই লেখা যেন শুধু একটি নাম নয়, বরং এক আত্মবিশ্বাসের পরিচয়। যেখানে দাঁড়িয়ে এক তরুণ বলছেন—"আমি বাংলাদেশ, আমি পারি।"

৩০০ সিসি ইঞ্জিন, আধুনিক ফিচার তিন চাকার এই যানটিতে রয়েছে ৩০০ সিসি ইঞ্জিন, অত্যাধুনিক ব্রেকিং সিস্টেম, স্টিল রোড গিয়ারিং, লাইটিং ও সাউন্ড সিস্টেম। সব মিলিয়ে এটি শুধু চমকপ্রদ ডিজাইন নয়, বাস্তবিক চালনাযোগ্য একটি যান।

তিনি নিজেই চালিয়ে গেছেন এই যান নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কেবল নেত্রকোণা নয়, এই যান ঘুরে এসেছে ঢাকা, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, কুমিল্লা— নানা জেলা ও শহর।

‘চাকরি পাইনি, কিন্তু হাত গুটিয়ে বসেও থাকিনি’ বুলবুল বলেন,
“আমি ছোটবেলা থেকেই নতুন কিছু বানাতে পছন্দ করতাম। চেষ্টা করতাম পুরোনো ভাঙাচোরা জিনিস দিয়ে কিছু একটা তৈরি করতে। চাকরি পাইনি, কেউ শেখায়ওনি। কিন্তু ইচ্ছা ছিল। সেই ইচ্ছার জোরেই আজ এটা বানাতে পেরেছি।”

উদ্ভাবকের চোখে ‘ভবিষ্যতের বাংলাদেশ’তিনি আরও বলেন,“বাংলাদেশে অনেক মেধাবী ছেলে আছে। কিন্তু সুযোগ পায় না। আমি চাই, আমার মত যারা গ্যারেজে কাজ করে বা বাসার বারান্দায় উদ্ভাবন করে, তাদের জন্য সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা থাকুক।”

স্থানীয়দের অভিমত নেত্রকোনার স্থানীয়রা বলেন, “আমরা কখনো ভাবিনি, আমাদের এলাকার ছেলে এমন কিছু বানাতে পারে। ওর গাড়িটা প্রথম দেখার পর কেউ বিশ্বাসই করতে পারছিল না যে এটা ওর বানানো। এখন আমরা গর্ব করি—বুলবুল আমাদের এলাকার ছেলে।”

প্রতিভার কোনো ডিগ্রি লাগে না বুলবুলের এই উদ্ভাবনী উদ্যোগ সমাজে এক নতুন প্রশ্ন তোলে—প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য কি সত্যিই কাগুজে সার্টিফিকেট প্রয়োজন, নাকি প্রয়োজন সুযোগ ও সাহস?

এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো বুলবুল নিজেই দিয়েছেন—
“প্রতিভার কোনো ডিগ্রি লাগে না, দরকার শুধু ইচ্ছা আর কঠোর পরিশ্রম।”

একটি পুরোনো গ্যারেজ আর কিছু পাট দিয়ে শুরু হওয়া বুলবুলের স্বপ্ন আজ অনেক দূর গেছে। তাঁর C.019 শুধু একটি যান নয়—এটি তরুণ উদ্ভাবকদের জন্য অনুপ্রেরণা, একটি দেশি গল্প, যা বলে—"তোমার হাতেই ভবিষ্যতের প্রযুক্তি।"

সাব্বির

×