
রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঘুমের জন্য অপেক্ষা করছেন, অথচ চোখে ঘুম নেই? তাহলে আপনি একা নন। আধুনিক গবেষণা বলছে, শুধু আমেরিকাতেই প্রতি তিনজনের একজন ঘুমের অভাবে ভুগছেন। অথচ প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৭ ঘণ্টা ঘুম না হলে শরীর ও মনের উপর পড়ে ভয়াবহ প্রভাব।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে গড়ে কমপক্ষে ৭ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। এর ঘাটতিতে দেখা দিতে পারে-
স্থায়ী ক্লান্তি, অস্থিরতা ও বিরক্তিভাব,মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা,উদ্বেগ ও বিষণ্নতা বৃদ্ধির ঝুঁকি,হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও স্থূলতার মতো রোগের আশঙ্কা।
ঘুমানোর জন্য অতিরিক্ত চেষ্টা করলে অনেক সময় মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়ে যায়, ফলে শরীরও ঘুমোতে পারে না। তাই ঘুমের জন্য শুধু শারীরিক নয়, মানসিক প্রস্তুতিও জরুরি।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে তিনটি বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন:
১. ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি (sleep hygiene)
২. ঘরের পরিবেশ
৩. সারাদিনে আপনি কী করেছেন
যদি সব কিছু ঠিক থাকলেও ঘুম আসতে দেরি হয়, তাহলে বিশেষ কিছু পদ্ধতি রয়েছে, যেগুলো সাহায্য করতে পারে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত একটি হলো-‘মিলিটারি মেথড’।
কী এই মিলিটারি মেথড?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন নৌবাহিনীর পাইলটদের ঘুমের সমস্যা কাটাতে একটি রিল্যাক্সেশন টেকনিক তৈরি করেন কোচ লয়েড বাড উইন্টার। তিনি তাঁর বই Relax and Win: Championship Performance–এ পদ্ধতিটি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন।
এই পদ্ধতিতে বলা হয়, নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যেও মাত্র ২ মিনিটে ঘুমিয়ে পড়া সম্ভব, যার শেষ ১০ সেকেন্ডে মস্তিষ্ক বিশ্রামে চলে যায়। গবেষণা অনুযায়ী, পাইলটদের মধ্যে প্রায় ৯৬ শতাংশ এই পদ্ধতিতে সফল হয়েছিলেন,এমনকি তারা কফি পান করার পরও, কিংবা গোলাগুলির শব্দের মধ্যেও।
কিভাবে করবেন এই পদ্ধতি?
১. প্রথমে মুখের সব পেশি ঢিলা করে দিন,চোয়াল, চোখের পাতা ও মুখের ভিতরের মাংসপেশি পর্যন্ত।
২. কাঁধ নামিয়ে দিন, চাপমুক্ত রাখুন। দুই হাত শরীরের পাশে স্বাভাবিকভাবে রাখুন।
৩. ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন ও বুকের পেশি ঢিলা করে দিন।
৪. এবার পায়ের পেশি ,উরু, হাঁটু ও পায়ের পাতার পেশি শিথিল করুন।
৫. ১০ সেকেন্ড ধরে এমন একটি শান্ত দৃশ্য কল্পনা করুন যেখানে আপনি সম্পূর্ণ নিরাপদ ও নিরিবিলি। যেমন,নিঃশব্দ হ্রদের পাশে শুয়ে থাকা, কিংবা নরম ঘাসে শীতল বাতাসের স্পর্শ।
৬. যদি কল্পনা ব্যর্থ হয়, তাহলে নিজের মনে বারবার বলুন “চিন্তা করো না”।
এই ধাপগুলো ঠিকভাবে অনুসরণ করলে, এক পর্যায়ে আপনি ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়তে পারেন।
কার ক্ষেত্রে এটি কম কাজ করতে পারে?
যাঁরা উদ্বেগ, মানসিক চাপ বা ADHD-তে ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে প্রথমবারেই এই পদ্ধতির ফল নাও মিলতে পারে। তবে নিয়মিত চর্চার মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই কৌশল কার্যকর হয়ে উঠতে পারে।
ঘুম ভালো করার বাড়তি কিছু পরামর্শ
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠা
ঘুমানোর ঘর যেন শান্ত, অন্ধকার ও শীতল থাকে
মোবাইল-কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে অন্তত ১ ঘণ্টা দূরে থাকা
ঘুমের আগে কফি বা চিনিযুক্ত খাবার পরিহার করা
হালকা ব্যায়াম ও ধ্যান চর্চা করা
সূত্র:https://tinyurl.com/2pxfkucm
আফরোজা