ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গোপনে শরীর নষ্ট করছে ইউরিক অ্যাসিড! এখনই জানুন কীভাবে রুখবেন

প্রকাশিত: ২০:০১, ২১ মে ২০২৫

গোপনে শরীর নষ্ট করছে ইউরিক অ্যাসিড! এখনই জানুন কীভাবে রুখবেন

ছবিঃ সংগৃহীত

উচ্চ ইউরিক অ্যাসিড বা হাইপারইউরিসেমিয়া স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর হুমকি। এটি গাউট বা ব্যথাযুক্ত জয়েন্টের সমস্যা, কিডনিতে পাথর ও অন্যান্য জটিলতার কারণ হতে পারে। তবে আশার কথা হলো, ওষুধ ছাড়াও কিছু সহজ অভ্যাসের মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবেই ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। নিচে এমনই ৭টি কার্যকর পরামর্শ তুলে ধরা হলো, যা নিয়মিত মেনে চললে মাত্র এক মাসেই ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা অনেকটাই কমে আসতে পারে।

১. বেশি করে পানি পান করুন

প্রচুর পানি পান করলে ইউরিক অ্যাসিড প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। দৈনিক ৮ থেকে ১৬ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন, শারীরিক কার্যক্রম এবং আবহাওয়া অনুযায়ী। এছাড়াও, লেবু পানি, হারবাল চা বা চিনি ছাড়া ফলের রস এবং তাজা ফল ও সালাদ গ্রহণ করুন যা শরীরকে ক্ষারীয় করে তোলে এবং ইউরিক অ্যাসিড নির্গমনে সহায়তা করে।

২. ভিটামিন ‘সি’ গ্রহণ বাড়ান

ভিটামিন ‘সি’ ইউরিক অ্যাসিড ভেঙে ফেলে ও শরীর থেকে বের করে দিতে সহায়তা করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কমলা, লেবু, জাম্বুরা, স্ট্রবেরি, কিউই, বেল পিপার, ব্রোকলি ও টমেটোর মতো ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল ও সবজি রাখুন। চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্টও গ্রহণ করতে পারেন।

৩. চেরি ও বেরি খান

চেরি এবং অন্যান্য বেরিতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং প্রদাহনাশক উপাদান ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সহায়তা করে। এটি গাউটজনিত ব্যথা ও ফোলাভাব কমাতেও কার্যকর। ফ্রেশ বা ফ্রোজেন চেরি খেতে পারেন, অথবা চিনি ছাড়া চেরির রস পান করতে পারেন।

৪. পিউরিনযুক্ত খাবার কমান

পিউরিন শরীরে ইউরিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়। তাই পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন লাল মাংস, সামুদ্রিক মাছ, শুঁটকি, চিংড়ি, ডাল ও কিছু বিশেষ মাছ সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। এছাড়াও মদ্যপান, বিশেষ করে বিয়ার এবং অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় পরিহার করুন। পরিবর্তে, পূর্ণ শস্য, কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার, ফলমূল ও সবজি বেছে নিন।

৫. ওজন কমান (যদি অতিরিক্ত ওজন থাকে)

অতিরিক্ত ওজন শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ায় এবং তা নির্গমনে বাধা দেয়। এমনকি সামান্য ওজন কমালেও ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা অনেকটা হ্রাস পায়। নিয়মিত হালকা বা মাঝারি শারীরিক ব্যায়ন, যেমন হাঁটা, সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানো কার্যকর হতে পারে। এতে মেটাবলিজম উন্নত হয় ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমে, যা ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৬. প্রাকৃতিক উপায়ে উপকার নিন

অ্যাপল সাইডার ভিনেগার ও লেবু পানি শরীরকে ক্ষারীয় করে এবং ইউরিক অ্যাসিড দূর করতে সহায়তা করে। আদা ও হলুদের প্রদাহনাশক গুণাগুণ রয়েছে, যা আপনি রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন বা চায়ের মতো করে পান করতে পারেন। এছাড়াও গুলঞ্চ (গিলয়), ত্রিফলা ও গুগ্গুলুর মতো ভেষজ উপাদান গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে তা ডাক্তারের পরামর্শে।

৭. অ্যালকোহল ও চিনি এড়িয়ে চলুন

অ্যালকোহল, বিশেষত বিয়ারে উচ্চমাত্রায় পিউরিন থাকে যা ইউরিক অ্যাসিড বাড়িয়ে তোলে। উচ্চ ফ্রুক্টোজযুক্ত পানীয় বা মিষ্টি খাবারও ইউরিক অ্যাসিড উৎপাদন বাড়ায়। এর পরিবর্তে প্রচুর পানি, হারবাল চা বা সীমিত মাত্রায় (দৈনিক ১-২ কাপ) ক্যাফেইনযুক্ত কফি গ্রহণ করতে পারেন, যা গবেষণায় গাউটের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে।

শেষ কথা
স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ওষুধের পাশাপাশি এসব প্রাকৃতিক পরামর্শ অনুসরণ করলে এক মাসের মধ্যেই ফল পেতে পারেন। তবে গুরুতর পরিস্থিতিতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

সূত্রঃ https://timesofindia.indiatimes.com/life-style/health-fitness/health-news/7-tips-to-bring-down-uric-acid-levels-in-one-month/photostory/121263852.cms

ইমরান

×