
ছবি: সংগৃহীত।
বিশ্বব্যাপী পুরুষদের মধ্যে একটি নীরব ঘাতক রোগ হিসেবে প্রোস্টেট ক্যানসার ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। বিশেষত মধ্যবয়সী ও বয়স্ক পুরুষদের জন্য এই ক্যানসারটি মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। সময়মতো শনাক্ত না হলে এটি জীবনসংহারী হয়ে উঠতে পারে। তবে সুখবর হলো—প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে এখন এই রোগের আগাম লক্ষণ শনাক্ত করা ও কার্যকর চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব।
এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করবো প্রোস্টেট ক্যানসারের প্রাথমিক ও জটিল লক্ষণ, ঝুঁকির কারণ, এবং চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ সম্পর্কে।
প্রোস্টেট ক্যানসার কী?
প্রোস্টেট ক্যানসার হলো পুরুষদের প্রোস্টেট গ্রন্থিতে উৎপন্ন হওয়া এক ধরনের ক্যানসার। এটি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং কখনো কখনো অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়ে। প্রোস্টেট গ্রন্থিটি মূত্রনালীর নিচে থাকে এবং শুক্রাণুকে পুষ্টি দিতে সহায়তা করে।
লক্ষণসমূহ:
প্রাথমিক অবস্থায় প্রোস্টেট ক্যানসারের তেমন কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। তবে রোগটি যতই এগোয়, ততই বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে, যেমন:
- ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ অনুভব করা
- প্রস্রাব শুরু বা থামাতে সমস্যা
- প্রস্রাবে রক্ত দেখা
- কোমরে, ঊরুতে বা পেলভিস অঞ্চলে স্থায়ী ব্যথা
- যৌন দুর্বলতা বা বীর্য নিঃসরণের সময় ব্যথা
এই উপসর্গগুলোর যেকোনো একটি দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ঝুঁকির কারণ:
- বয়স: ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের ঝুঁকি বেশি
- পারিবারিক ইতিহাস: নিকট আত্মীয়ের মধ্যে কেউ আক্রান্ত হলে ঝুঁকি বাড়ে
- খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ
- জাতিগত বৈশিষ্ট্য: আফ্রিকান ও ক্যারিবিয়ান বংশোদ্ভূতদের মধ্যে ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি
নির্ণয় ও পরীক্ষা:
প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্তে মূলত নিচের পরীক্ষাগুলো ব্যবহৃত হয়:
- PSA (Prostate-Specific Antigen) টেস্ট: রক্তের মাধ্যমে প্রোস্টেট গ্রন্থির নির্দিষ্ট প্রোটিনের পরিমাণ নির্ণয়
- ডিজিটাল রেক্টাল এক্সামিনেশন (DRE): আঙুলের মাধ্যমে প্রোস্টেট গ্রন্থির অস্বাভাবিকতা পরীক্ষা
- বায়োপসি: প্রোস্টেট কোষ সংগ্রহ করে ল্যাব পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিতকরণ
- MRI/CT স্ক্যান: ক্যানসারের বিস্তার নির্ধারণে সহায়ক
চিকিৎসা পদ্ধতি:
চিকিৎসা নির্ভর করে রোগীর বয়স, ক্যানসারের স্তর ও বিস্তারের ওপর। মূল চিকিৎসাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- সার্জারি (Prostatectomy): প্রোস্টেট গ্রন্থি অপসারণ
- Radiation Therapy: রেডিওওয়েভের মাধ্যমে ক্যানসার কোষ ধ্বংস
- Hormone Therapy: টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে ক্যানসার কোষ নিয়ন্ত্রণ
- Chemotherapy: ওষুধের মাধ্যমে কোষ ধ্বংস (প্রসারিত ক্যানসারে কার্যকর)
- Active Surveillance: ধীরে বাড়তে থাকা ক্যানসারের ক্ষেত্রে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ
প্রতিরোধ ও সচেতনতা:
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা (সবজি ও ফলমূলের আধিক্য)
- নিয়মিত ব্যায়াম
- ৫০ বছর বয়সের পর থেকে বার্ষিক প্রোস্টেট পরীক্ষা
- ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা
প্রোস্টেট ক্যানসার নিরব ঘাতক হলেও সময়মতো সচেতনতা, পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তকরণ এবং চিকিৎসা গ্রহণ করলে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। পুরুষদের উচিত নিজের শরীরের প্রতি সচেতন থাকা এবং যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
নুসরাত