ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

স্মৃতি ভুলে যাচ্ছেন? গবেষণা বলছে যে ৫টি অভ্যাস আপনার মস্তিষ্ক ধ্বংস করছে

প্রকাশিত: ০০:৫০, ২২ মে ২০২৫; আপডেট: ০০:৫১, ২২ মে ২০২৫

স্মৃতি ভুলে যাচ্ছেন? গবেষণা বলছে যে ৫টি অভ্যাস আপনার মস্তিষ্ক ধ্বংস করছে

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই ভুলে যাওয়ার প্রবণতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। হঠাৎ করে কারও নাম মনে না থাকা, চাবি কোথায় রেখেছেন তা ভুলে যাওয়া, কিংবা দিনের নির্দিষ্ট কাজ ভুলে যাওয়া,এসব উপসর্গকে আমরা সাধারণত ‘বয়সজনিত’ বিষয় হিসেবে মনে করি। কিন্তু সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, এমন কিছু অভ্যাস রয়েছে, যা প্রতিনিয়ত আমাদের মস্তিষ্কের কোষের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে এবং দীর্ঘমেয়াদে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে পেতে ডিমেনশিয়া বা অ্যালঝাইমারের মতো রোগের ঝুঁকি তৈরি করছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের National Institute on Aging, যুক্তরাজ্যের Alzheimer’s Society এবং Harvard Medical School-এর গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু দৈনন্দিন অভ্যাস ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং স্নায়ুকোষের মধ্যে সংযোগ দুর্বল করে দেয়। নিচে এমন পাঁচটি অভ্যাস তুলে ধরা হলো, যেগুলো নিয়মিত চর্চা করলে স্মৃতি দুর্বল হয়ে যেতে পারে-


প্রথমত, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া।
মানব মস্তিষ্ক দিনের তথ্য সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের কাজটি মূলত ঘুমের সময়েই করে। গভীর ঘুমের অভাবে স্মৃতির দীর্ঘমেয়াদি গঠন ব্যাহত হয়। Sleep Foundation–এর মতে, প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম না হলে ব্রেন ফাংশন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ, মনোযোগ ও শেখার ক্ষমতা হ্রাস পায়। ঘুমের ঘাটতি দীর্ঘমেয়াদে স্মৃতিভ্রষ্টতা ও নিউরোলজিক্যাল ডিজঅর্ডারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে।


দ্বিতীয়ত, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া।
Journal of Neurology, Neurosurgery & Psychiatry–এ প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত, হাইড্রোজেনেটেড ফ্যাট এবং প্রিজারভেটিভ সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত গ্রহণ করলে মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ধরনের খাবার স্নায়ু কোষের মধ্যে ইনফ্ল্যামেশন তৈরি করে, যার ফলে মেমোরি ও কগনিটিভ ক্ষমতা কমে যায়। বিশেষ করে ফাস্টফুড, সফট ড্রিঙ্কস এবং রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট এই ক্ষতির প্রধান উৎস।


তৃতীয়ত, স্থির জীবনযাপন বা শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা।
শরীর চলাচলহীন থাকলে রক্তপ্রবাহের গতি কমে যায়, যার প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কে পৌঁছানো অক্সিজেন ও গ্লুকোজের মাত্রায়। Harvard Health Publishing–এর তথ্যমতে, নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করলে হিপোক্যাম্পাস,যেটি মস্তিষ্কের স্মৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ তার কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় বসে থাকা বা মোটেই ব্যায়াম না করলে এই অংশের সংকোচন শুরু হয়।


চতুর্থত, অতিরিক্ত মানসিক চাপ।
চাপ বা স্ট্রেস দীর্ঘস্থায়ী হলে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়ে, যা মস্তিষ্কের নিউরোনের মধ্যে ক্ষয় সৃষ্টি করে। University of California, Berkeley–এর গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপ থাকলে হিপোক্যাম্পাসে কোষের গঠন বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে নতুন কিছু শেখা বা পুরোনো কিছু মনে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। চাপ কমাতে মেডিটেশন, সময়মতো বিশ্রাম এবং প্রয়োজন হলে কাউন্সেলিং গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।


পঞ্চমত, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা একাকীত্ব।
মস্তিষ্কের বিকাশ এবং স্মৃতির ধারাবাহিকতা রক্ষায় সামাজিক যোগাযোগের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। Alzheimer’s & Dementia: The Journal of the Alzheimer’s Association–এর এক গবেষণায় উঠে এসেছে, যারা দীর্ঘ সময় একাকীত্বে থাকেন বা সামাজিক যোগাযোগহীন থাকেন, তাদের কগনিটিভ ডিক্লাইন ও স্মৃতি দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং সক্রিয় সামাজিক জীবন মস্তিষ্কে ডোপামিন ও অক্সিটোসিনের নিঃসরণ বাড়ায়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বয়স বাড়ছে বলে স্মৃতি দুর্বল হচ্ছে এমন ধারণা এখন আর একমাত্র ব্যাখ্যা নয়। বরং জীবনযাত্রার ধরন, খাদ্যাভ্যাস, ঘুম, মানসিক চাপ এবং সামাজিক আচরণের ওপর নির্ভর করে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকবে কি না। একারণে সময় থাকতেই এই ক্ষতিকর অভ্যাসগুলো পরিহার করে সচেতন জীবনযাত্রা বেছে নেওয়া উচিত।

 

 


সূত্র:Harvard Medical School: Health Publishing

আফরোজা

×