ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চিনির পরিবর্তে গুড়: স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো? বিশেষজ্ঞের মত জানুন

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ২২ মে ২০২৫

চিনির পরিবর্তে গুড়: স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো? বিশেষজ্ঞের মত জানুন

ছবিঃ সংগৃহীত

চিনির অতিরিক্ত ব্যবহারে বাড়ছে ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা। এই প্রেক্ষাপটে অনেকেই পরিশোধিত চিনির পরিবর্তে গুড়কে স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। তবে গুড় কি সত্যিই চিনির তুলনায় ভালো? এর উপকারিতা যেমন রয়েছে, তেমনি কিছু সতর্কতাও অবলম্বন করা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। 

গুড় শুধু মিষ্টি নয়, পুষ্টিগুণে ভরপুর
রক্ষিতা মেহরার মতে, গুড় কেবল একটি প্রাকৃতিক মিষ্টিকারক নয়, বরং একটি পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান। পরিশোধিত চিনির তুলনায় গুড়ে রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ। ফলে এটি শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী হতে পারে। তিনি বলেন, “যারা স্বাস্থ্য সচেতন, তাঁদের জন্য গুড় একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। এটি শুধু মিষ্টির তৃপ্তি দেয় না, বরং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ সরবরাহ করে।”

গুড় খাওয়ার উপকারিতা
বিশেষজ্ঞের মতে, চিনির পরিবর্তে গুড় খেলে যে উপকারগুলি পাওয়া যায়, তা হল:

হজম শক্তি বৃদ্ধি: গুড় পাচক উৎসেচক সক্রিয় করে, যা খাবার দ্রুত হজমে সাহায্য করে।

ডিটক্সিফিকেশন: এটি যকৃতকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।

হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধ: পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ: গুড় ধীরে শক্তি ছাড়ে, ফলে হঠাৎ করে রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যায় না এবং ক্ষুধা কমে।

সতর্কতা: গুড় মানেই স্বাস্থ্যকর নয়। যদিও গুড় উপকারী, তবে তা অতিরিক্ত গ্রহণ করলে ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন রক্ষিতা মেহরা।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ: গুড়ের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স চিনির তুলনায় কম হলেও, এটি রক্তে চিনির মাত্রা বাড়াতে পারে।

বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন: অনেক বাণিজ্যিকভাবে তৈরি গুড়ে রাসায়নিক বা সংরক্ষণকারী উপাদান মেশানো থাকে। ফলে সেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

অ্যালার্জি বা সংবেদনশীলতা: যারা আখ বা চিনিজাত পণ্যে অ্যালার্জিক, তাঁদের জন্য গুড় হজমের সমস্যা, ত্বকের সমস্যা বা শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।

কারা গুড় খাওয়া এড়িয়ে চলবেন? বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নীচের কয়েকটি ক্ষেত্রে গুড় খাওয়া সীমিত বা বন্ধ রাখাই ভালো:

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে নেই

যারা IBS (Irritable Bowel Syndrome) বা সংবেদনশীল অন্ত্রের সমস্যায় ভোগেন

কঠোর ক্যালোরি নিয়ন্ত্রিত ডায়েটে রয়েছেন

আখ বা চিনির প্রতি অ্যালার্জি আছে

চিনির বিকল্প হিসেবে গুড় গ্রহণ করা স্বাস্থ্যকর একটি সিদ্ধান্ত হতে পারে, তবে এর পরিমাণ এবং গুণমান এই দুই বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট রক্ষিতা মেহরা বলেন, “গুড় চিনির তুলনায় পুষ্টিকর, তবে এটি এখনো চিনি। তাই মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। সর্বোত্তম উপায় হল অর্গানিক বা প্রাকৃতিকভাবে প্রস্তুত গুড় বেছে নেওয়া এবং নিয়মিত খাওয়ার পরিবর্তে মাঝেমধ্যে সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা।”

সূত্রঃ দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস 

নোভা

×