
রসুনের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে যুগ যুগ ধরে আলোচনা চলে আসছে। এটি শুধু রান্নার উপাদান নয়, বহু সংস্কৃতিতে ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে রসুনের কার্যকারিতা নিয়ে একাধিক গবেষণাও রয়েছে। অনেকেই সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়াকে ভালো স্বাস্থ্যের লক্ষণ মনে করেন।
কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা ও চিকিৎসাবিদদের পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, এই অভ্যাস সব সময় শরীরের জন্য নিরাপদ নয়। বরং এটি কিছু ক্ষেত্রে বিপজ্জনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি করতে পারে।
National Center for Complementary and Integrative Health (NCCIH)–এর তথ্য অনুযায়ী, রসুনে থাকা অ্যালিসিন নামক যৌগটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব রাখলেও এটি অত্যন্ত প্রভাবশালী একটি রাসায়নিক উপাদান। খালি পেটে রসুন খাওয়া হলে এটি সরাসরি পাকস্থলীতে প্রবেশ করে এবং অনেকের ক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিক মিউকাসকে উত্তেজিত করে তোলে, যার ফলে পেটে জ্বালাপোড়া, গ্যাস, বুক জ্বালা, এমনকি আলসারের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে যাদের হজমশক্তি দুর্বল বা আগে থেকেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, তাদের জন্য খালি পেটে রসুন গ্রহণ আরও বেশি ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে।
গবেষণা অনুযায়ী, কাঁচা রসুন খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে অ্যাসিডের নিঃসরণ বেড়ে যায়। অনেক সময় এতে এসিড রিফ্লাক্স বা গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) এর লক্ষণ দেখা দিতে পারে। Verywell Health–এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, যারা নিয়মিত রসুন খাচ্ছেন, বিশেষ করে সকালে খালি পেটে, তারা অনেক সময় মুখে দুর্গন্ধ, মাথা ঘোরা, বমিভাব বা ক্লান্তি অনুভব করেন। এগুলো রসুনের সক্রিয় রাসায়নিক উপাদানের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেই দেখা দিতে পারে।
এ ছাড়া রসুনে থাকা সালফারযুক্ত যৌগ হজমপ্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলে জানা গেছে। এতে অন্ত্রে গ্যাস তৈরি হয় এবং কিছু ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে ডায়রিয়া বা মলত্যাগের সমস্যা দেখা দিতে পারে। National Library of Medicine–এ প্রকাশিত একটি রিভিউ অনুসারে, রসুন অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া হলে তা রক্তে জমাট বাঁধার স্বাভাবিক ক্ষমতাকে হ্রাস করে দিতে পারে, যা রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। সেক্ষেত্রে যারা রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ গ্রহণ করেন বা যাদের শল্যচিকিৎসা (সার্জারি) করার সম্ভাবনা রয়েছে, তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে ক্ষতিকর।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রসুন অবশ্যই একটি কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান, কিন্তু এটি গ্রহণের পদ্ধতি, সময় ও পরিমাণ ঠিক না হলে এর উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হতে পারে। খালি পেটে রসুন খাওয়ার প্রবণতা ব্যক্তিভেদে বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। কারও শরীর সহজে গ্রহণ করলেও, অন্য কারও ক্ষেত্রে এটি পাকস্থলীতে অস্বস্তি ও প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
চিকিৎসাবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী, রসুন গ্রহণের সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হলো রান্না করা খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করা অথবা পরিমাণ মতো চিবিয়ে খাওয়া, তবে খাওয়ার সময় যেন পাকস্থলীতে অন্তত কিছু খাদ্য থাকে তা নিশ্চিত করা। খালি পেটে সরাসরি রসুন খাওয়ার আগে অবশ্যই ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা, হজমশক্তি এবং পূর্বের কোনও সমস্যা আছে কি না তা যাচাই করা উচিত।
অতএব, প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে রসুন উপকারী হলেও তা খালি পেটে খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরে যে জটিলতা তৈরি হতে পারে, তা এখন গবেষণাভিত্তিকভাবেই প্রমাণিত। তাই স্বাস্থ্যসচেতনতা মানে কেবল ঘরোয়া টোটকা মেনে চলা নয়, বরং গবেষণাভিত্তিক পরামর্শ গ্রহণ করাও জরুরি।
সূত্র:https://tinyurl.com/2k5ax8yv
আফরোজা