ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জুমার দিনের গুরুত্ব ও বিশেষ আমল: সাপ্তাহিক ঈদ ও ক্ষমা লাভের সুবর্ণ সুযোগ

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ১৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৭:০৯, ১৩ জুন ২০২৫

জুমার দিনের গুরুত্ব ও বিশেষ আমল: সাপ্তাহিক ঈদ ও ক্ষমা লাভের সুবর্ণ সুযোগ

ছবি:এমডি সাব্বির

ইসলাম ধর্মে জুমার দিনটি মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে এই দিনটিকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "নিশ্চয় আল্লাহ এ দিনটিকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন।" তাই জুমার দিনটি মুমিনের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং গুনাহ মাফের এক অনন্য সুযোগ নিয়ে আসে। এই দিনে কিছু বিশেষ আমল রয়েছে, যা পালন করলে বান্দা অফুরন্ত সওয়াব ও রহমত লাভ করতে পারে।

জুমার দিনের অন্যতম প্রধান আমল হলো জুমার নামাজ আদায় করা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, "পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান মধ্যবর্তী সময়ের পাপ মোচন করে; যদি সেই ব্যক্তি সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।" অপর এক হাদিসে হজরত সালমান ফারসি (রা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে, সাধ্যমতো পবিত্র হয়, তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর মসজিদে আসে, দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে না গিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ে এবং ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকে; তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করে দেন।

জুমার দিনে গোসল করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। গোসল করে সবার আগে মসজিদে যাওয়া অনেক সওয়াবের কাজ। হজরত আউস বিন আউস সাকাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালো করে গোসল করল, দ্রুততর সময়ে মসজিদে গেল ও (ইমামের) কাছাকাছি বসে মনোযোগসহ (খুতবা) শুনল, তার জন্য প্রতি কদমের বদলে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব থাকবে।" একইভাবে, জুমার নামাজের জন্য মসজিদে সবার আগে প্রবেশ করারও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে প্রথমে মসজিদে গেল সে যেন একটি উট কোরবানি করল। যে এরপর মসজিদে গেল, সে যেন একটি গরু কোরবানি করল। আর যে এরপর ঢুকল, সে যেন ছাগল কোরবানি করল..."।

জুমার দিনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এই দিনে বিশেষ একটি সময়ে দোয়া কবুল হয়। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, "জুমার দিন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছুর দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দেন। তোমরা সময়টি আছরের পর অনুসন্ধান করো।" অন্য একটি হাদিসে তিনি বলেন, "জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এই মুহূর্তটি তোমরা আছরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান করো।"

জুমার দিনের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো সুরা কাহাফ পাঠ করা। হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।"

নবী করিম (সা.)-এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করারও ফজিলত রয়েছে এই দিনে। হজরত আউস বিন আবি আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, "তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং এই দিনে সবাইকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণ দরুদ পড়। কারণ জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।"

উপরিউক্ত হাদিসগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, জুমার দিনের কিছু বিশেষ কাজে বান্দা আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অফুরন্ত সওয়াব লাভ করে। যেমন, নখ কাটা, শরীরের অবাঞ্ছিত লোম পরিষ্কার করা, উত্তমরূপে গোসল করা, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন পোশাক পরা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, এবং জুমার নামাজে এসে অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে না টপকে সামনের দিকে না যাওয়া। এছাড়া, নির্ধারিত নামাজ আদায় করে ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকা। এই আমলগুলো করলে পূর্ববর্তী জুমা থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সব সগিরা গুনাহের কাফফারা হয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে জুমার দিনের এসব আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

সাব্বির

×