ছবি: সংগৃহীত।
গত এক দশকে বিশ্বব্যাপী ইসলাম ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার। সংস্থাটির ‘গ্লোবাল রিলিজিয়াস ল্যান্ডস্কেপ’ শীর্ষক সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে ইসলামের অনুসারী বেড়েছে প্রায় ৩৫ কোটি, যা খ্রিষ্টধর্মের প্রবৃদ্ধির তুলনায় প্রায় তিন গুণ এবং অন্য সব ধর্মের সম্মিলিত হারের চেয়েও বেশি।
গবেষণা বলছে, মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ উচ্চ প্রজনন হার ও কম গড় বয়স। ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে গড়ে একজন মুসলিম নারী ২.৯ সন্তান জন্ম দিয়েছেন, যেখানে অমুসলিম নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ২.২। ফলে প্রাকৃতিকভাবেই মুসলিম জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
বর্তমানে বিশ্বে ইসলাম দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম, যার অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ২০০ কোটি, অর্থাৎ বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ মুসলমান। গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান উৎস ধর্মান্তর নয়, বরং জন্মহার।
গবেষণায় দেখা গেছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেই এই প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো কাজাখস্তান, বেনিন ও লেবানন, যেখানে মুসলিম জনসংখ্যার হার দ্রুত বেড়েছে। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে ওমান ও তানজানিয়ায় মুসলিম অনুপাত কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।
অন্যদিকে, খ্রিষ্টধর্ম এখনো বিশ্বের সর্ববৃহৎ ধর্ম (প্রায় ২৩০ কোটি অনুসারী), তবে গত দশকে এই ধর্মে ধর্মত্যাগের হার বেশি। গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতি একজন নতুন ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টানের বিপরীতে তিনজন খ্রিষ্টধর্ম ত্যাগ করেছেন।
ধর্মহীনতা বা নির্দিষ্ট ধর্মের প্রতি অনাগ্রহ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মহীন মানুষের সংখ্যা ২০১০ সালের তুলনায় বেড়েছে ৯৭%। আর চীনে প্রায় ১৩০ কোটি মানুষ নিজেকে কোনো ধর্মের অনুসারী হিসেবে চিহ্নিত করেন না।
এই সময়কালে হিন্দুধর্ম অনুসারীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১২ কোটি ৬০ লাখ, মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২০ কোটিতে। তবে বিশ্বের জনসংখ্যার অনুপাতে এই ধর্মের অনুপাত অপরিবর্তিত রয়ে গেছে।
অন্যদিকে, বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারীর সংখ্যা কমেছে ১ কোটি ৮৬ লাখ—যা প্রধান ধর্মগুলোর মধ্যে একমাত্র নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি।
গবেষণার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য হলো—ইসলামই একমাত্র প্রধান ধর্ম, যেখানে ধর্মান্তরের মাধ্যমে ধর্ম গ্রহণের হার ধর্মত্যাগের চেয়ে বেশি। পিউ রিসার্চের মতে, এটি ইসলাম ধর্মের বিস্তারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা ভবিষ্যতে আরও বড় প্রভাব ফেলতে পারে বৈশ্বিক ধর্মীয় ভারসাম্যে।
নুসরাত
