
ছবিঃ সংগৃহীত
এক নেতা, এক দেশ—এই স্লোগানে স্বাধীনতার পরে যাত্রা শুরু করে শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশ। কিন্তু সেই স্লোগানের আড়ালে শুরু হয় রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, রাজনৈতিক দমন এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের এক নতুন অধ্যায়। স্বাধীনতার পরপরই গঠিত হয় 'রক্ষীবাহিনী' নামের আধা-সামরিক একটি বাহিনী, যা প্রথমে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলে শুরু হলেও দ্রুতই রূপ নেয় একটি নিপীড়ন চালানো যন্ত্রে।
১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে গঠিত এই বাহিনী অল্প সময়েই জনগণের মাঝে ভয়, আতঙ্ক এবং নিঃশ্বাসরুদ্ধ এক পরিবেশের প্রতীক হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক বিরোধীদের ধরে নিয়ে যাওয়া, নির্যাতন, গুম ও হত্যার মতো ঘটনা ছিল তখনকার বাস্তবতা। রক্ষীবাহিনীর অপতৎপরতা দেশের গণতান্ত্রিক চেতনাকে স্তব্ধ করে দেয়। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের প্রথম সাংগঠনিক রূপ।
ঠিক সেই রুপরেখাকেই অনুসরণ করে ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে এসে শেখ হাসিনা তাঁর শাসনামলে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় গড়ে তোলেন একটি ভয়ঙ্কর নিপীড়ন কাঠামো—যেটিকে অনেকে রক্ষীবাহিনীর আধুনিক সংস্করণ বলেও উল্লেখ করছেন। এ সময় দেশে শুরু হয় বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং ভিন্নমতের মানুষের ওপর গুম, খুন, অমানবিক নির্যাতনের ধারাবাহিকতা।
পিলখানা হত্যাকাণ্ড, হেফাজতের আন্দোলনে সহিংস দমন, বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীদের বিচার ও নির্যাতন এবং মতবিরোধী সাধারণ মানুষের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় প্রশ্নের মুখে পড়ে সরকারের মানবাধিকার রেকর্ড। রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নিরাপত্তার নামে যেসব বাহিনী সক্রিয় ছিল, তাদের কার্যক্রম অনেকাংশেই ছিল অপ্রকাশ্য এবং জবাবদিহিহীন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দীর্ঘ শাসনামল যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। একসময় শেখ মুজিবের ছায়ায় গড়া রক্ষীবাহিনী যে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল, ঠিক তেমনই বা আরও ভয়ঙ্করভাবে বর্তমান সময়ে সরকার-সমর্থিত বলয়ে গড়ে উঠেছে নিপীড়ন বাহিনী।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সময়কে যেমন রক্ষীবাহিনীর সহিংস শাসনের জন্য চিহ্নিত করা হয়, তেমনি ২০০৯ পরবর্তী সময়কে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দমননীতির জন্য মনে রাখছে দেশবাসী।
রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও দমনপীড়নের এই পুনরাবৃত্তি গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য এক বড় হুমকি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ আরও অন্ধকারে তলিয়ে যেতে পারে।
ইমরান