
নজরুল ইসলাম খান
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জনগণ আর কতদিন অপেক্ষা করবে অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে এমন প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাগপা আয়োজিত দলের প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, স্বাধীনতা-সাবভৌমত্ব সুরক্ষা ও ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।
সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি করা অপরাধ বলে মন্তব্য করে নজরুল খান বলেন, এর আগে রাজতন্ত্র ছিল, তারও আগে ছিল সামন্তবাদ। গণতন্ত্র যে এসেছে, এটাও তো একটা সংস্কারের মধ্য দিয়ে এসেছে, একটা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এসেছে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমেরিকায় যেভাবে গণতন্ত্র কার্যকর হয়, যুক্তরাজ্যে সেভাবে হয় না, ফ্রান্সে যেভাবে হয়, ভারতে সেভাবে হয় না, নেপালে যেরকম হয়, বাংলাদেশে সে রকম হয় না, একেক দেশে একেকভাবে গণতন্ত্র কার্যকর হয়। কাজেই সংস্কার আর গণতন্ত্র পরস্পরবিরোধী না, এটা পরিপূরক। সেজন্যই আমরা বলি, বিচারও হতে হবে, সংস্কারও হতে হবে, নির্বাচনও হতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব হতে হবে।
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, বাংলাদেশের গর্বিত জনগণ যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন, যারা গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছেন, যারা স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন। আর আমরা যারা বেঁচে আছি, গণতন্ত্রের প্রত্যাশায় বসে আছি। সেই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কথা বলছি, স্লোগান দিচ্ছি, সভা-সমাবেশ করছি। আর কতদিন, কতবার আমাদের এই কাজ করতে হবে?
নজরুল খান বলেন, এখন নানা রকমের প্রশ্ন তোলা হচ্ছে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে বাধা সৃষ্টির জন্য। এটা করতে হবে আগে, ওটা করতে হবে আগে। আগে-পরে করার প্রশ্ন তো নাই। যা যা করা দরকার, সবই করতে হবে। ফ্যাসিবাদীদের বিচার কেন বিলম্ব হচ্ছে- এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, আমি বলতে চাই শুধু ফ্যাসিবাদীদের নয়, ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর যারা ছিল, যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, যারা তাদের সঙ্গে ছিল, তাদের সবার বিচার অবশ্যই করতে হবে। কারণ, তারা আমার বিরুদ্ধে, আমার পরিবারের বিরুদ্ধে, আমার বন্ধুর বিরুদ্ধে, আমার সহকর্মীর বিরুদ্ধে, আমার দেশবাসীর বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে।
নজরুল ইসলাম বলেন, অবশ্যই বিচার চাই। কিন্তু সেই বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন করা যাবে না। এই প্রশ্ন যারা তোলেন, তারা আসলে এই কথা বলে নির্বাচনটাকে বিলম্বিত করতে চান। সরকারকে আমরা বলেছি, আরেকটা ট্রাইব্যুনাল করেন আপনারা, একটা ট্রাইব্যুনালে হবে না। কারণ, এত বেশি লোকের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে।
জাগপার সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে ও সহসভাপতি এম এ ওহাবের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় দলের সৈয়দ চেয়ারম্যান এহসানুল হুদা, এনডিপির নেতা আবু তাহের, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, জাগপার প্রেসিডিয়াম সদস্য খন্দকার আবিদুর রহমান, আসম মিজবাহ উদ্দিন, রকিব উদ্দিন চৌধুরী মুন্না প্রমুখ।
ড. ইউনূসের মাধ্যমে একটা ভালো নির্বাচন প্রত্যাশা করি- দুদু॥ দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবি করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, আমরা ড. ইউনূসের মাধ্যমে একটা ভালো নির্বাচন প্রত্যাশা করি। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দল আয়োজিত ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দুদু বলেন, এ সরকারের প্রতি জনগণের সমর্থন, আশা ও বিশ্বাস ছিল, সেই সমর্থন আশা ও বিশ্বাস আস্তে আস্তে টুটে যাচ্ছে। তাই অতি সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি অনুধাবন করে দ্রুত একটি ভালো জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে যাবে সরকার- এটাই আমরা আশা করি। যদি ড. ইউনূস ফেল করেন, তাহলে সুপ্রিম কোর্টকে অনুরোধ করব, এদেশে গণতন্ত্রের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে। সুপ্রিম কোর্টেরও দায়িত্ব আছে দেশ ও জনগণকে রক্ষা করা।
আওয়ামী লীগের মতো এখনো প্রতিহিংসার রাজনীতি চলছে মন্তব্য করে দুদু বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পরও মেয়র হতে দেওয়া হয়নি ইশরাক হোসেনকে। কোর্ট তাকে রায় দেওয়ার পরও তাকে শপথ করানো হচ্ছে না। এখন সম্পূর্ণ প্রতিহিংসামূলক কাজ করছে সরকার। কোর্টের রায় যদি কেউ না মানেন, তাকে ফ্যাসিস্ট বলা যায়। এ সরকার কি সেই লাইনে যাচ্ছে কিনা চিন্তার বিষয়।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি হুমায়ুন কবির বেপারীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক জোটের প্রধান সমন্বয়কারী রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী, কৃষক দলের সাবেক নেতা এসকে সাদী, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন, সাংস্কৃতিক দলের উপদেষ্টা আলহাজ মো. হাসানুল ইসলাম রাজা প্রমুখ।