
ছবি: সংগৃহীত
পুলিশ কনস্টেবল স্ত্রীর বিধবা বড় বোনের স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সবুজ হোসেন আকনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বরিশালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করেছেন ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর মা। ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম মামলায় আনা অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য কাউনিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২০ মে) দিবাগত রাতে মহানগরীর কাউনিয়া থানার ওসি নাজমুল নিশাত জনকণ্ঠকে বলেন, আদালতের আদেশ এখনো হাতে পাইনি। আদেশ হাতে পেলে আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মামলায় একমাত্র আসামি সবুজ হোসেন আকন (৪১) জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার বকশির চর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান আকনের ছেলে। তিনি (সবুজ) বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি বলে নিশ্চিত করেছেন সংগঠনের জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট তারেক আল ইমরান।
মামলার বাদী ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্রীর বিধবা মা বলেন, তার বোন পুলিশ কনস্টেবল। অস্ত্রপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেওয়ায় তাকে দেখাশোনার জন্য এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েকে ২০২৪ সালের ২৩ জুলাই বোনজামাতা সবুজের গ্রামের বাড়ি বাবুগঞ্জ বকসিরচর গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। মাঝে মধ্যে কেনাকাটা করার জন্য সবুজ তার মেয়েকে বরিশাল শহরে নিয়ে যেতেন।
তিনি আরও জানান, কিছুদিন যেতে না যেতেই তার মেয়েকে সবুজ আকন কুপ্রস্তাব দেন। এতে সে রাজি না হলে তাকে হত্যার ভয়ভীতি দেখিয়ে আসামি সবুজ বরিশাল নগরীর আমানাতগঞ্জ এলাকায় তার ভাড়া বাসায় নিয়ে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করেন।
ভুক্তভোগী স্কুল ছাত্রী (১৫) অভিযোগ করে বলেন, সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর আমি নির্যাতিত হয়ে মায়ের কাছে ফিরে আসি। এ সময় খালু সবুজ আকন নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে একটি ভুয়া কামিননামা তৈরি করে আমাকে স্ত্রী হিসেবে দাবি করে। পরে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য গৌরনদী উপজেলায় নানা বাড়িতেও আসে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় খালু সবুজ আকন তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে আমাকে অপহরণেরও চেষ্টা করে।
গৌরনদী উপজেলার বাবার বাড়িতে আশ্রিত নির্যাতনের শিকার স্কুল ছাত্রীর বিধবা মা ও মামলার বাদি বলেন, ‘আমি চিন্তা করেছিলাম মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলে বরিশাল ছেড়ে গোপালগঞ্জের স্বামীর বাড়িতে চলে যাবো। কিন্তু সবুজ আকন তার সহযোগিদের নিয়ে একাধিকবার আমার বাবার বাড়ি থেকে স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে অপহরণের চেষ্টা করে। এ ঘটনার পর এলাকার সবাই বিষয়টি জেনে গেছে। এমনকি সবুজ আমাকে ও আমার মেয়েকে বহুবার প্রাণনাশেরও হুমকি দিয়েছে। বর্তমানে আমরা জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। উপায়ন্তর না পেয়ে ১৯ মে আদালতে মামলা দায়ের করতে বাধ্য হয়েছি।’
মামলার বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান বলেন, মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য আদালতের বিচারক মহানগরীর কাউনিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছে। বাদী ও ভিকটিম মামলা দায়েরের পর অনেকটা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে মামলার আসামি বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সবুজ হোসেন আকন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
বরিশাল জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম ইমরান বলেন, মামলার বিষয়টি লোকমুখে জেনেছি। এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে বিষয়টি কেন্দ্রকে অবহিত করা হবে। কেন্দ্র থেকেই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খোকন আহম্মেদ হীরা/রাকিব