
পাকিস্তানে ভ্রমণ নিয়ে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে একাধিক ভিডিও পোস্ট করা ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রা এখন সংবাদের শিরোনামে এসেছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে। ৩৩ বছর বয়সী এই কনটেন্ট ক্রিয়েটরকে পাকিস্তানের জন্য গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) ও গোয়েন্দা ব্যুরো (আইবি) তার বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে।
সম্প্রতি তার ডায়েরির দুটি পৃষ্ঠা হরিয়ানা পুলিশ উদ্ধার করেছে, যেখানে পাকিস্তানে তার ১০ দিনের অভিজ্ঞতার ঝলক উঠে এসেছে।
একটি অনির্ধারিত তারিখের ডায়েরি এন্ট্রিতে লেখা ছিল:
“আজ আমি পাকিস্তানে ১০ দিনের সফর শেষে আমার দেশে, ভারতে ফিরে এসেছি। এই সময়ে আমি পাকিস্তানের মানুষদের কাছ থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। আমাদের সাবস্ক্রাইবার ও বন্ধুরাও দেখা করতে এসেছিলেন। আমরা যে দুই দিন লাহোরে কাটাতে পেরেছি, তা যথেষ্ট ছিল না।”
পাকিস্তানকে “রঙিন” বলে বর্ণনা করে তিনি লেখেন, সেখানে তার অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
ডায়েরির আরেকটি অংশে তিনি পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে অনুরোধ করেন:
“ওখানকার মন্দিরগুলো রক্ষা করুন এবং ১৯৪৭ সালে যাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, তাদের যেন ভারতের মানুষদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়।”
হরিয়ানার এই কনটেন্ট নির্মাতা যিনি ‘ট্রাভেল উইথ জো’ নামক ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করতেন, তাকে গত ১৬ মে গ্রেপ্তার করা হয় এবং সরকারি গোপনীয়তা আইন (Official Secrets Act) ও ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (Bharatiya Nyaya Sanhita)-র অধীন বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত দুই সপ্তাহে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশ থেকে মোট ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তদন্তকারীরা দাবি করছেন, পাকিস্তান সংশ্লিষ্ট একটি গুপ্তচর নেটওয়ার্ক উত্তর ভারতে সক্রিয় রয়েছে।
এনআইএ জ্যোতির আর্থিক লেনদেন ও বিদেশ সফরের খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখছে। পুলিশ জানিয়েছে, তার পরিচিত আয়ের উৎস তার বিদেশ ভ্রমণ ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, তার ল্যাপটপে ফরেনসিক বিশ্লেষণ চলছে এবং যেসব ব্যক্তি তার সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন, তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তদন্তের সময়, পাকিস্তান হাইকমিশনে কর্মরত একজন কর্মকর্তার সঙ্গে জ্যোতির যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি এহসান-উর-রহুম ওরফে দানিশ নামের একজনের সংস্পর্শে আসেন ২০২৩ সালে পাকিস্তান ভিসার জন্য হাইকমিশনে গেলে। পরে জানা যায়, ১৩ মে এহসান-উর-রহুমকে তার কূটনৈতিক মর্যাদার পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকার কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এর আগে, হিশারের এসপি শশাঙ্ক কুমার সাওন বলেন, “জ্যোতিকে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ‘অ্যাসেট’ হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “এটি আধুনিক যুদ্ধ, যা শুধু সীমান্তে নয়, সামাজিক মাধ্যমেও লড়া হয়। আমরা একটি নতুন পদ্ধতির সন্ধান পেয়েছি যেখানে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্যক্তিরা কিছু সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছিল।”
অফিসার আরও জানান, জ্যোতি পেহেলগামের হামলার আগে কাশ্মীরে গিয়েছিলেন এবং তারও আগে পাকিস্তান সফর করেন। পুলিশ এখন এই সফরগুলোর মধ্যে সংযোগ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।
মুমু