
ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এফও) মঙ্গলবার ভারতের সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে, যেখানে বলা হয়েছিল—পাকিস্তান নাকি অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরে হামলার চেষ্টা করেছে। উল্লেখ্য, স্বর্ণ মন্দির শিখ ধর্মের অন্যতম পবিত্র স্থান।
সম্প্রতি দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এই অভিযোগ তোলে নয়াদিল্লি। গত মাসে অধিকৃত কাশ্মীরের পেহেলগামে প্রাণঘাতী এক হামলার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে দায়ী করা হয়—তবে কোনো প্রমাণ ছাড়া। পাকিস্তান তীব্রভাবে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানায়। পরবর্তীতে পরিস্থিতি যখন সামরিক সংঘাতে রূপ নেয়, তখন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
এর আগের দিন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে, পাকিস্তান স্বর্ণ মন্দিরে হামলার চেষ্টা করেছিল এবং সেই হামলা "সফলভাবে প্রতিহত" করা হয়েছে। দ্য হিন্দু পত্রিকা এই খবর প্রকাশ করে।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা জানান, স্বর্ণ মন্দির কর্তৃপক্ষকে “পাকিস্তান থেকে আসা সম্ভাব্য ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি মোকাবিলায়” অস্ত্র মোতায়েনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “সৌভাগ্যবশত, আমরা বুঝতে পেরেছিলাম ওরা (পাকিস্তান) কী করতে পারে… ওদের আসল উদ্দেশ্য ছিল অভ্যন্তরীণ বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, তাই আমরা অনুমান করি যে ওরা আমাদের বেসামরিক জনগণ ও ধর্মীয় উপাসনালয়কে লক্ষ্য করতে পারে।”
এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শফকত আলী খান বলেন, “আমরা ভারতের এই অভিযোগ স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছি যে পাকিস্তান স্বর্ণ মন্দিরকে টার্গেট করার চেষ্টা করেছে, যা শিখ ধর্মের সর্বাধিক পবিত্র স্থানগুলোর একটি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সবধরনের উপাসনালয়কে গভীর শ্রদ্ধার চোখে দেখি এবং কখনওই স্বর্ণ মন্দিরের মতো একটি পবিত্র স্থানে হামলার কথা চিন্তা করতে পারি না।”
তিনি অভিযোগ করেন, ভারত গত ৬-৭ মে পাকিস্তানে একাধিক উপাসনালয়ে হামলা চালিয়েছে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগ সেই অগ্রহণযোগ্য ঘটনার দৃষ্টি সরিয়ে নিতে পারে না।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “শিখ ধর্মের বহু পবিত্র স্থানের গর্বিত অভিভাবক পাকিস্তান। প্রতিবছর বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে হাজারো শিখ তীর্থযাত্রীকে স্বাগত জানায় দেশটি।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, পাকিস্তান কর্তারপুর করিডরের মাধ্যমে গুরুদ্বারা সাহিব কর্তারপুরে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়ে থাকে।
“এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বর্ণ মন্দিরে হামলার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।”
সোমবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় মিডিয়ার প্রচারিত “পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন শাহীন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের” খবরও এফও মুখপাত্র প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি জানান, ভারতীয় সেনাবাহিনী পরে ওই “ভ্রান্ত ভিডিও” মুছে ফেলে, কারণ তারা বুঝতে পারে—এই দাবি ছিল “অপ্রমাণিত”।
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের মিথ্যা গল্প ভারতের একটি নিরবিচ্ছিন্ন প্রচারণার অংশ, যার মাধ্যমে তারা যুদ্ধবিরতি বিষয়ে মিথ্যা বর্ণনা তৈরি করতে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তথাকথিত ‘পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল’-এর ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে ধরতে চায়।”
সূত্র: https://www.dawn.com/news/1912162/fo-rejects-indian-claim-of-pakistan-targeting-sikh-holy-site-golden-temple-in-amritsar
এএইচএ