
দৈনিক জনকণ্ঠ
Google I/O সম্মেলনে গুগল তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক নতুন প্রকল্প ‘Project Astra’ উন্মোচন করেছে, যা AI প্রযুক্তিকে আরও বাস্তবসম্মত, প্রাকৃতিক এবং দ্রুততর যোগাযোগের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের Google I/O সম্মেলনে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আনা হয় এই AI এজেন্ট, যা দেখে, শুনে, এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম।
Project Astra মূলত একটি মাল্টিমোডাল AI সহকারী, যার কাজের পদ্ধতি প্রচলিত চ্যাটবট বা ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টদের চেয়ে অনেক বেশি উদ্ভাবনী। এটি ভিডিও, অডিও এবং ভাষা-তিনটি ইনপুট একসঙ্গে বিশ্লেষণ করে প্রাসঙ্গিক ও বাস্তবমুখী সাড়া প্রদান করতে পারে। Project Astra প্রথমবারের মতো সর্বসমক্ষে উপস্থাপিত হয়। এটি গুগলের DeepMind বিভাগের তৈরি একটি মাল্টিমোডাল AI এজেন্ট, যা কেবল ভাষা নয়, বরং ভিডিও ও অডিও বিশ্লেষণ করে বাস্তব সময়েই মানুষের মতো প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম।
Project Astra-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি দেখতে, শুনতে এবং বুঝতে পারে, এবং তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। এটি চলন্ত ক্যামেরা থেকেও পরিবেশ বিশ্লেষণ করতে পারে এবং স্মৃতিশক্তির মতো আগের দেখা বা শোনা জিনিস মনে রাখতে পারে। ব্যবহারকারীর কথাবার্তা, আশপাশের পরিবেশ এবং প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে AI সহকারীটি নিজের প্রতিক্রিয়া দেয়।
গুগল জানিয়েছে, Astra ভবিষ্যতে ব্যবহারকারীদের চোখের সামনে থাকা বস্তু ব্যাখ্যা করতে পারবে স্মার্ট গ্লাসের মাধ্যমে। আপনার চশমায় দৃশ্য যা পড়ছে, মোবাইলের ক্যামেরা যেদিকে তাকাচ্ছে, সেখানকার জিনিস শনাক্ত করে তাৎক্ষণিক ব্যাখ্যা দিচ্ছে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এ যেন কল্পবিজ্ঞান নয়, বাস্তবেই ঘটতে চলেছে। গুগলের নতুন উদ্ভাবন 'Project Astra' সেই বাস্তবতারই নাম, যা মানব-যন্ত্র যোগাযোগের এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে।
মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেও এটি কাজ করবে, যেখানে ক্যামেরা অন করলেই AI আশপাশ বিশ্লেষণ করতে পারবে। একইসঙ্গে, ডেভেলপারদের জন্য এটি API আকারে উন্মুক্ত করা হবে, যাতে অন্যান্য অ্যাপেও এই ক্ষমতা সংযোজন করা যায়।
Astra ব্যবহারযোগ্য হতে পারে প্রযুক্তি সহায়তা, শিক্ষা, প্রবীণদের সহায়তা, নিউরোডাইভার্স ব্যবহারকারীদের সহায়ক সেবা, এমনকি শপিংয়ের ক্ষেত্রেও। যেমন, কোনো ডিভাইসের সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান, শিক্ষার্থীদের জন্য লাইভ ব্যাখ্যা, বয়স্কদের জন্য স্মার্ট সহকারী, অটিজম বা ADHD আক্রান্তদের সহায়ক সহযোগিতা এবং প্রোডাক্ট স্ক্যান করে দাম ও রিভিউ জানিয়ে দেওয়ার মতো কাজগুলো সহজেই করা যাবে।
Project Astra অন্যান্য AI চ্যাটবট থেকে আলাদা, কারণ এটি কনটেক্সট বুঝতে পারে, চোখ দিয়ে দেখে, কানে শোনে এবং স্মৃতিশক্তির মতো পূর্ববর্তী তথ্য মনে রাখতে পারে। এর প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিক এবং এতে কোনো ধরনের বিরতি বা ল্যাগ থাকে না।
তবে এ ধরনের শক্তিশালী প্রযুক্তির কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা, ভুল ব্যাখ্যার সম্ভাবনা এবং ডেটা সংরক্ষণ ও ব্যবহারের স্বচ্ছতা নিয়ে কিছু উদ্বেগ রয়েছে। গুগল আশ্বস্ত করেছে যে, Astra তৈরি করা হচ্ছে নিরাপত্তা এবং ব্যবহারকারীর অধিকার বিবেচনায় রেখেই।
পরিশেষে, Project Astra কেবল একটি AI প্রযুক্তি নয়, এটি ভবিষ্যতের এক নতুন দিগন্তের দরজা খুলে দিচ্ছে। যান্ত্রিক সহকারী নয়, বরং বাস্তব জীবনসঙ্গীর মতো কাজ করার সক্ষমতা নিয়ে Astra আমাদের চিন্তা, শেখা এবং প্রযুক্তির সাথে সম্পর্ককে আমূল বদলে দিতে পারে। এখন হয়ত সেই ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষার দিন শেষ কারণ তার নামই হতে পারে Project Astra।
হ্যাপী