ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বরফের নিচে লুকানো পারমাণবিক ঘাঁটি! আমেরিকা গ্রিনল্যান্ড কিনতে চায় কেন?

প্রকাশিত: ১৯:২০, ২১ মে ২০২৫

বরফের নিচে লুকানো পারমাণবিক ঘাঁটি! আমেরিকা গ্রিনল্যান্ড কিনতে চায় কেন?

ছবি: সংগৃহীত

গ্রীনল্যান্ডের বরফের নিচে সম্প্রতি এক আশ্চর্যজনক আবিষ্কারের মুখে পড়েছেন বিজ্ঞানীরা। 'টুড অনলিক রিসার্চ সেন্টার'-এর একদল গবেষক যখন বরফের গভীরে স্ক্যান করার জন্য নতুন রেডার প্রযুক্তি পরীক্ষা করছিলেন, তখন প্রায় ১০০ ফুট নিচে একটি পরিত্যক্ত কাঠামোর সন্ধান পান। প্রাথমিকভাবে এটি কোনো হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার নিদর্শন বলে মনে হলেও পরে জানা যায়—এটি আসলে ছিল শীতল যুদ্ধের সময় নির্মিত একটি গোপন সামরিক ঘাঁটি।

ঘাঁটির নাম ছিল ‘ক্যাম্প সেঞ্চুরি’, যা যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রজেক্ট আইসওয়ার্ম’-এর অংশ হিসেবে ১৯৫৯ সালে গড়ে তোলা হয়। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেন্টাগনের এই গোপন প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল গ্রীনল্যান্ডের বরফের নিচে পারমাণবিক মিসাইল লঞ্চ সাইট নির্মাণ, যার লক্ষ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন।

এই ঘটনাটি আবারো স্মরণ করিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রীনল্যান্ডের মধ্যকার দীর্ঘ রাজনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্কের ইতিহাস। ১৯৫১ সালে ডেনমার্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে গ্রীনল্যান্ডে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অধিকার পায় আমেরিকা। শীতল যুদ্ধের সময় গ্রীনল্যান্ডে মোট ১৭টি ঘাঁটি স্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে মোতায়েন ছিল প্রায় ১০,০০০ সৈন্য।

বর্তমানে সেখানে শুধুমাত্র একটি মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে, যেখানে নিয়োজিত রয়েছে মাত্র দুজন সৈন্য। তবে সামরিক উপস্থিতি হ্রাস পেলেও গ্রীনল্যান্ডের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ আজও কমেনি। ১৮৬৭ ও ১৯৪৬ সালে তারা দ্বীপটি কিনতে চেয়েছিল। এমনকি ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রীনল্যান্ড কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু ডেনমার্ক স্পষ্টভাবে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।

গ্রীনল্যান্ডকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের পেছনে রয়েছে একাধিক কৌশলগত ও অর্থনৈতিক কারণ। দ্বীপটি উত্তর মহাসাগর ও উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝখানে অবস্থিত হওয়ায় সামরিক ও মিসাইল সতর্কতা ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র, গ্রীনল্যান্ড, আইসল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের মধ্যবর্তী জলপথে রাডার স্থাপনের মাধ্যমে রাশিয়া ও চীনের জাহাজ চলাচল পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনাও রয়েছে।

তাছাড়া গ্রীনল্যান্ডে রয়েছে বিরল মৃত্তিকা ধাতুসমূহ (Rare Earth Minerals), যা ব্যাটারি ও হাইটেক শিল্পে ব্যবহৃত হয়। ২০২৩ সালের এক জরিপে দেখা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত ৩৪টি গুরুত্বপূর্ণ খনিজের মধ্যে ২৫টিই পাওয়া যায় গ্রীনল্যান্ডে।

রাজনৈতিকভাবে গ্রীনল্যান্ড বর্তমানে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হলেও, এটি এখনো ডেনমার্কের অধীনে রয়েছে। তবে ২০০৯ সাল থেকে তাদের স্বাধীনতা ঘোষণার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। গ্রীনল্যান্ড ইইউ’র সদস্য না হলেও OCT (Overseas Countries and Territories) স্ট্যাটাসের আওতায় ইইউ এর বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা ভোগ করে। সেই সুবাদে গ্রীনল্যান্ডবাসীরাও ইইউ নাগরিক হিসেবে বিবেচিত।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রীনল্যান্ড অধিগ্রহণের আকাঙ্ক্ষা ইউরোপীয় রাজনীতিতে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। ডেনমার্ক ও গ্রীনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন—“আমরা বিক্রি হবো না, কখনোই না।” জার্মান চ্যান্সেলর এবং ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীও ট্রাম্পের পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ ন্যাটো এবং ইইউ-এর মধ্যে বড় ধরনের ফাটল ধরাতে পারে, যা বৈশ্বিক রাজনীতির গতিপথ পাল্টে দিতে পারে।

গ্রীনল্যান্ড এখন শুধুই বরফের দ্বীপ নয়, বরং বিশ্বশক্তিগুলোর দৃষ্টি কেন্দ্রে একটি কৌশলগত ভূখণ্ড।

সূত্র: https://youtu.be/ahQh0nDKYdQ?si=ozr_8fcTAxkRGFWb

আসিফ

×