
ছবি: সংগৃহীত
মুসলিম বিশ্বের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান আল আকসা মসজিদে আবারও ইসরাইলি আগ্রাসনের চিত্র ফুটে উঠেছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই মসজিদ মুসলিমদের ইবাদত ও আধ্যাত্মিকতার কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। মহান আল্লাহ তাআলার সঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেরাজের সম্পর্ক এই মসজিদকে মুসলিমদের কাছে বিশেষ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে।
তবে মুসলিমদের এই পবিত্র স্থানের ওপর আবারও দখলদার চোখ পড়েছে। গত মঙ্গলবার ডজনখানেক ইসরাইলি নাগরিক আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে জোরপূর্বক প্রবেশ করে। এ সময় তাদের নিরাপত্তা দিতে ইসরাইলি সেনারা উপস্থিত ছিল। শুধু অনুপ্রবেশ করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, বরং আল আকসার বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে।
এই দৃশ্য গভীরভাবে আঘাত করেছে স্থানীয় মুসলিমদের হৃদয়ে। একে মুসলিমদের ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতা লঙ্ঘনের জঘন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন অনেকে। একইদিনে পশ্চিম তীরেও ইসরাইলি সেনাদের দমন-পীড়ন আরও জোরদার হয়েছে।
রাতের আঁধারে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফিলিস্তিনিদের আটক করছে ইসরাইলি বাহিনী। ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর ধ্বংস করা হচ্ছে, সাধারণ মানুষদের ওপরও চালানো হচ্ছে সহিংস হামলা। মঙ্গলবার রাতে বেতলেহেমসহ আশেপাশের এলাকায় কমপক্ষে ১০ জন ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে তারা। এছাড়া নাবলুসের উল আসকারা শরণার্থী শিবির ও আল খালিলের মাসাফের ইয়াট্টা এলাকায়ও হামলা চালানো হয়েছে। এক ফিলিস্তিনি দম্পতি সেখানে ইসরাইলি সেনাদের হামলায় আহত হন।
এরই ধারাবাহিকতায় পশ্চিম তীরের জেনিন, তোলকারেম, নাবলুস, রামাল্লা, সিলওয়াদ ও তুরমুস আইয়া এলাকায় একযোগে অভিযান চালানো হয়েছে। শরণার্থী শিবিরগুলো থেকেও ফিলিস্তিনিদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইসরাইলি বাহিনী হামাসের বিরুদ্ধে টানা চতুর্থ দিনের মতো অভিযান চালাচ্ছে এবং বেসামরিক ঘরবাড়িকে সামরিক খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই আগ্রাসন ও সহিংসতা ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন জীবনকে করে তুলেছে দুর্বিষহ এবং মানবিক সংকটকে পৌঁছে দিচ্ছে চরম পর্যায়ে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ‘আল আকসা ফ্লাড’ অভিযানের মাধ্যমে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের সূচনা ঘটে। সেইদিন হামাস ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক রকেট হামলা চালায় এবং স্থলপথে অনুপ্রবেশ করে ইসরাইলি সেনা ও নাগরিকদের হত্যা ও জিম্মি করে। জবাবে গাজায় সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরাইল, যার ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, যা শান্তিপূর্ণ সমাধানের পরিবর্তে একটি গভীর মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে গোটা অঞ্চলকে।
আসিফ