
ছবি: সংগৃহীত।
কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক এক সহিংস ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ফের চরমে উঠেছে, আর তারই পরিণতিতে পানি কূটনীতি আবারও কেন্দ্রবিন্দুতে।
ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানে পানি সরবরাহ বন্ধের হুমকি দেওয়ার পর চীন পাকিস্তানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ প্রকল্পের গতি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভির সূত্রে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে অবস্থিত মোহমন্দ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে কংক্রিট ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে, যা প্রকল্পটির উন্নয়নের একটি মাইলফলক।
২০১৯ সালে শুরু হওয়া মোহমন্দ বাঁধ প্রকল্পটি ২০২৬ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও, ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক উত্তেজনার কারণে চীন এর কাজ দ্রুততর করতে চায়। এতে দেখা যাচ্ছে, ভারতের হুমকির প্রতিক্রিয়ায় চীনের কৌশলগত সক্রিয়তা।
ভারত ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে, বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এরপরই চীন মোহমন্দ প্রকল্পে কাজের গতি বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।
ভারতের সম্ভাব্য পানি সরবরাহ বন্ধের হুমকির জবাবে পাকিস্তান জানিয়েছে: “পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা মানে যুদ্ধ ঘোষণা। পাকিস্তানের জাতীয় শক্তি দিয়ে এর জবাব দেওয়া হবে।”
পাকিস্তানের তথ্য অনুযায়ী, মোহমন্দ ড্যাম থেকে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, প্রতিদিন পেশোয়ারে সরবরাহ হবে প্রায় ৩০ কোটি গ্যালন পানীয় জল, প্রকল্পটি সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও খরার সময় পানি মজুদের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ।
চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রশাসন পাকিস্তানে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (CPEC) প্রকল্পের মাধ্যমে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। এই করিডরের আওতায় ডায়ামার ভাষা ড্যাম সহ একাধিক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করছে চীন।
পাশাপাশি, চীন পাকিস্তানকে ‘লৌহকঠিন বন্ধু’ বলে আখ্যায়িত করে দেশটিতে অস্ত্র সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবেও কাজ করছে।
চীন যদিও সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার বিষয়ে সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে, তবে তাদের পদক্ষেপ ও বিনিয়োগ ভারতের জন্য কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
বিশ্লেষকদের মতে, চীন এই অঞ্চলে তার অবকাঠামো, জ্বালানি ও নিরাপত্তা প্রভাব জোরদার করতে চাইছে—যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পাকিস্তান।
উল্লেখ্য, ভারত-চীন নিজস্ব সীমান্ত বিরোধও এখনও মীমাংসিত নয়। ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দুই দেশের সেনাদের মৃত্যু হয়েছিল।
যদিও এখনই বলা যায় না যে ভারত পুরোপুরি কোনঠাসা হয়ে পড়েছে কিনা, তবে সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো ইঙ্গিত দেয়—আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চীন ও পাকিস্তান ক্রমেই একত্রে এগোচ্ছে এবং ভারতের কৌশলগত পরিসর সংকুচিত হতে পারে, যদি না দিল্লি দ্রুত পাল্টা কূটনৈতিক ও কৌশলগত উদ্যোগ গ্রহণ করে।
নুসরাত