ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সমর্থকদের উদ্দেশে ইশরাক

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ২১ মে ২০২৫; আপডেট: ০১:৩৫, ২২ মে ২০২৫

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না

ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে সাত দিন ধরে নগরভবন অবরুদ্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে টানা এক সপ্তাহ ধরে রাজপথে আন্দোলন করছেন তার সমর্থকরা। তাদের উদ্দেশে নতুন করে বার্তা দিয়েছেন বিএনপির এই তরুণ নেতা। সন্ধ্যায় রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে চলা আন্দোলনে সন্ধ্যায় সরাসরি অংশ নেন তিনি।

এ সময় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই আন্দোলন ডিসেম্বরের মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ও নির্বাচনের ভোট সঠিকভাবে গণনার জন্য। আমাদের পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। দাবি মানা না হলে আমরা ঘরে ফিরব না। আমি সবাইকে বলব আপনারা আপনাদের ভোটের অধিকার ফিরে চান। এ সময় ইশরাক স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকেও পদত্যাগের আহ্বান জানান।
বুধবার নগর ভবনের পরিবর্তে রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ইশরাকের অনুসারী ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। এর ফলে পুরো মৎস্য ভবনের আশপাশের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা হাইকোর্ট গেট, প্রেসক্লাব ও শিক্ষা ভবনের মোড়ে জড়ো হন। পরে সবাই একসঙ্গে মৎস্য ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নেয়। বিকেলের দিকে বৃষ্টির মধ্যে তারা মৎস্য ভবন সামনের সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে।
বিকেলে ইশরাকের সমর্থক ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার প্রবেশমুখে কাকরাইল মসজিদের মোড়ে অবস্থান করতে দেখা গেছে। বিকেল ৬টা পর্যন্ত কাকরাইল মসজিদের সামনের সড়কে তাদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালতের রায় ঘোষণা পর্যন্ত দলের নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে, আদালতের রায় তাদের পক্ষে না গেলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইশরাক সমর্থকরা।
এ বিষয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচির সমন্বয়কারী সাবেক সচিব মশিউর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না এলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। প্রয়োজনে ঢাকাকে অচল করে দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
‘পেছনে ফেরার সুযোগ নেই’: ইশরাক  
রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে চলা আন্দোলনে সন্ধ্যায় সরাসরি অংশ নেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। এতে আন্দোলন আরও জোরদার হয়। এ সময় তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, আজকের এই আন্দোলন শুধু এক ব্যক্তি ইশরাক হোসেনের জন্য নয়। এই আন্দোলন ডিসেম্বরের মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ও নির্বাচনের ভোট সঠিকভাবে গণনার জন্য।
তিনি বলেন, আমাদের পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা ঘরে ফিরব না। আমি সবাইকে বলব আপনারা আপনাদের ভোটের অধিকার ফিরে চান।
ইশরাক স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকেও পদত্যাগের আহ্বান জানান। ইশরাক হোসেন বলেন, আদালতের রায় অনুযায়ী আমাকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করানোর কথা ছিল।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের হস্তক্ষেপের কারণে তিনি শপথ নিতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন। ইশরাক বলেন, এই সরকারের মধ্যে নতুন দলের কয়েকজনের রয়ে গেছে। এই দলের প্রতি আমাদের অনেকে আশাবাদ ছিল। তাদের দুজন উপদেষ্টা এই সরকারে থেকে অনেক কিছুতে হস্তক্ষেপ করছেন।
তিনি আরও বলেন, আমাকে মেয়র হিসেবে আদালতের দেওয়া রায়ের ওপর তারা হস্তক্ষেপ করছেন। এখনই স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করছি। তাদের সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত পরিচয় নেই, কোনো শত্রুতা নেই।
ইশরাক আরও বলেন, আজ যে আন্দোলনটি হচ্ছে সেটি আমার প্রতি যে বৈষম্য করা হয়েছে, আদালতের রায়ের মাধ্যমে এতদিনে শপথ নিয়ে বসার কথা সেটা দিচ্ছে না। কিন্তু আমি আবারও বলতে চাই আজকের এই আন্দোলন ক্ষমতা বা পদের জন্য নয়।
তিনি বলেন, সরকার কীভাবে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করবে, সেটা সরকারকেই নির্ধারণ করতে হবে। আমি প্রথমেই যেটা চাইব, সেটা হচ্ছেÑ স্থানীয় সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার পদত্যাগ করতে হবে। আমি ওনাদের (আসিফ ও মাহফুজ) বলব, আপনারা পদত্যাগ করে আপনাদের দলে চলে যান সসম্মানে। আমরা এখন এটাই বলব নির্বাচনের সঠিক রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।
সরেজমিনে রাজধানীর মৎস্য ভবন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বুধবার সকাল থেকেই নগর ভবনে না গিয়ে মৎস্য ভবন মোড়ে অবস্থান নিচ্ছেন ইশরাক সমর্থকরা। এতে ওই এলাকায় সকাল থেকেই যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে নগর ভবনের সামনের সড়ক ছিল অনেকটাই ফাঁকা। সেখানে কোনো লোকজন দেখা যায়নি। তবে, নগর ভবনের ভেতরে সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য দিনের মতো বুধবারও নগরভবনের বিভিন্ন বিভাগের অফিসে তালা লাগানো ছিল। ফলে, সব ধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ ছিল ডিএসসিসি’র প্রধান কার্যালয়ে।
রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা ॥ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে শপথ না পড়ানোর আগ পর্যন্ত সমর্থকদের উদ্দেশে রাজপথ না ছাড়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। মেয়র হতে এবার জনতার আন্দোলনে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে তিনি এ ঘোষণা দেন। ইশরাক বলেন, আন্দোলনকারী জনতার প্রতি সর্বাত্মক সংহতি জানাতে এবং তাদের সঙ্গে যতদিন প্রয়োজন রাজপথে সহঅবস্থান করার জন্য অল্প সময়ের মধ্যেই হাজির হব ইনশাআল্লাহ।
এর এক ঘণ্টা আগে তিনি আরেকটি পোস্ট দেন। যেখানে তিনি লেখেন- গেজেট প্রকাশের পর পতিত ফ্যাসিবাদের অন্যতম শীর্ষ কর্তা অপসারিত মেয়র তাপসের পক্ষ নিয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচন কমিশনে রীতিমত চিঠি লিখে। গেজেট প্রকাশের পর শপথ অনুষ্ঠান না করে এই ধরনের চিঠি দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে এক প্রকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এটি দেখে আইন সম্পর্কে যারা জানেন তারা হতবাক ও চরম বিস্মিত হয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। কোর্টের রায় কার্যকর করতে তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তাপসের এই কাজটি করে না দিতে পেরে এখন তাপসের টাকা খেয়ে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে বিক্ষোভ করেছে একটি রাজনৈতিক দল। এই অভিযোগ কেউ তুললে কি ভুল বলা হবে?’
দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি ॥ বুধবার ফেসবুকে এক পোস্টে ইশরাক হোসেন উল্লেখ করেন, গণতান্ত্রিক ভাষায়, রাজনৈতিক শিষ্টাচার মেনে যৌক্তিক কারণে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে অন্তর্বর্তী সরকারের সকল দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছি। যেহেতু এটা প্রতীয়মান যে, আপনারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন, হয়তো আগামীতে সরাসরি যুক্ত হবেন। এটাও অনেকটা স্পষ্ট আপনারা নির্বাচন করবেন। তাহলে আপনাদের পদত্যাগের দাবি কি অযৌক্তিক? নাকি এটাই সঠিক পদক্ষেপ হবে এবং আপনাদের নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের অবসান ঘটবে।

×