
ছবি: জনকন্ঠ
যেই বয়সে স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা আর বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করার কথা, সেই বয়সে জীবনযুদ্ধে নেমেছে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার এক শিশু—আলিফ। মাত্র ১২ বছর বয়সেই পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য হয়ে উঠেছে সে। মাথায় করে পাপড় বিক্রি করে চালাচ্ছে সংসার। এ যেন এক অসম সময়ে বড় হয়ে ওঠার নির্মম বাস্তবতা।
আলিফের বাড়ি হোসেনপুর উপজেলার আদু মাস্টার বাজার এলাকায়। ছোটবেলায়ই বাবাকে হারিয়েছে সে—এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায়। বাবার মৃত্যু যেন তার শৈশবকে কেড়ে নিয়েছে। সংসারের ভার এখন তার মা আর আলিফের কাঁধে। মা শ্রীপুরের মাওনা থেকে পাপড় সংগ্রহ করে আনেন, আর আলিফ সেই পাপড় বিক্রি করে সংসারের খরচ জোগায়।
প্রতিদিন ভোরবেলায় বের হয়ে পড়ে আলিফ। কখনো বাজারে, কখনো দোকানে, কখনোবা গ্রামের পথ ধরে হাঁটে সে। দিনে আয় হয় প্রায় ৪০০–৫০০ টাকা, যার মধ্যে লাভ থাকে ২৫০–৩০০ টাকার মতো। এই সামান্য আয় দিয়েই চলছে তিন সদস্যের ছোট্ট পরিবারটির দিন।
আলিফের কাছ থেকে নিয়মিত পাপড় কেনেন রাসেল মিয়া। তিনি বলেন, “আলিফের জীবনের গল্পটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি বাংলাদেশের হাজারো শিশুর প্রতিচ্ছবি—যারা সমাজের অবহেলায় শিশুশ্রমে আটকে পড়েছে। তাদের স্বপ্নগুলো প্রতিদিন একটু একটু করে নিঃশেষ হচ্ছে। এই শিশুদের শুধু সহানুভূতি নয়, দরকার সক্রিয় সহায়তা।”
আলিফের মতো শিশুদের জন্য প্রয়োজন ভালোবাসা, সহযোগিতা আর সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা। হয়তো কেউ একটু এগিয়ে এলেই আবার স্কুলের পথে ফিরতে পারবে তারা। বইভর্তি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ফিরতে পারবে রঙিন শৈশবে—যা হারিয়ে গিয়েছিল জীবনের কঠিন বাস্তবতায়।
মুমু