
ছবি: সংগৃহীত
স্নাতক হওয়ার পর ডিগ্রির আনন্দ থাকলেও অনেকের জন্য বাস্তবতা দ্রুতই ভিন্নরকম রূপ নেয়-চাকরি নেই। “তুমি কী করতে চাও?”-এমন প্রশ্নের উত্তর না জানা অনেক তরুণকে হতাশ করে। আপনি হয়তো ইঞ্জিনিয়ারিং, মার্কেটিং, কম্পিউটার সায়েন্স বা অ্যাকাউন্টিংয়ের মতো প্রাসঙ্গিক বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছেন, কিন্তু বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় একটি চাকরি পাওয়া সহজ নয়।
অনেক নতুন গ্র্যাজুয়েট বলেন, “আমি শুধু একটা চাকরি চাই।” কিন্তু পেশাদার ক্যারিয়ার পরামর্শকদের মতে, এটি ভুল দৃষ্টিভঙ্গি। শুধুমাত্র চাকরি নয়, ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য প্রয়োজন সঠিক ক্যারিয়ার গড়ার উদ্যোগ। এর জন্য দরকার চারটি মূল ভিত্তির উপর গুরুত্ব দেওয়া: দক্ষতা, শক্তি, আগ্রহ এবং সুযোগ।
যেভাবে শুরু করবেন?
নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন: আমার আগ্রহ কী?, আমার স্কিল বা শক্তি কী?, আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ কী?, বর্তমানে কে চাকরি দিচ্ছে?
লিংকডইনের ২০২৫ গ্র্যাজুয়েট গাইডে তারা লাখ লাখ পেশাদারের ক্যারিয়ার ট্র্যাক বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে-স্নাতকদের প্রথম চাকরি কোনটি ছিল, কোন সেক্টর দ্রুত বাড়ছে, এবং কোন শহরগুলো সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি চাকরির সুযোগ দিচ্ছে।
দ্রুত বর্ধনশীল ১০টি পেশা: ১. এআই ইঞ্জিনিয়ার, ২. ল’ ক্লার্ক, ৩. ডেটা সেন্টার টেকনিশিয়ান, ৪. সিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ার, ৫. ফিনান্সিয়াল প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যানালাইসিস স্পেশালিস্ট, ৬. বিজনেস ডেভেলপমেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ, ৭. অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যানালিস্ট, ৮. প্রোডাক্ট অ্যাসোসিয়েট, ৯. সার্ভিস ডেস্ক স্পেশালিস্ট, ১০. ক্লিনিশিয়ান (ডাক্তার, নার্স, পিএ)।
যেহেতু প্রযুক্তি খাতে নিয়োগ কিছুটা কমেছে, আপনি চাইলে অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতগুলো বিবেচনায় নিতে পারেন, যেমন: নির্মাণ খাত, ইউটিলিটি সার্ভিস, তেল, গ্যাস ও খনিশিল্প, আর্থিক পরিষেবা, হোলসেল ব্যবসা, বিনোদন পরিষেবা, প্রশাসনিক ও সহায়ক পরিষেবা, রিয়েল এস্টেট।
অনেকে নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলসের মতো ব্যয়বহুল শহরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন, কিন্তু লিংকডইনের গবেষণা অনুযায়ী, যেসব শহর সাশ্রয়ী এবং চাকরির ভালো সুযোগ দেয়, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল: টুসন, অ্যারিজোনা, সাভান্না, জর্জিয়া, টালাহাসি, ফ্লোরিডা, চাটানুগা, টেনেসি, ভর্জিনিয়া বিচ, ভার্জিনিয়া, টালসা, ওকলাহোমা, নক্সভিল, টেনেসি, ডালাস, টেক্সাস, সান অ্যান্টোনিও, টেক্সাস, হিউস্টন, টেক্সাস। এছাড়া টেক্সাস, ফ্লোরিডা এবং টেনেসি রাজ্যগুলোতে স্টেট ইনকাম ট্যাক্স নেই, যা নতুন গ্র্যাজুয়েটদের জন্য বাড়তি সুবিধা।
ক্যারিয়ারে ভুল সিদ্ধান্ত সময় ও অর্থ দুই-ই নষ্ট করতে পারে। তাই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালোভাবে গবেষণা করুন: চাকরির কাজগুলো সম্পর্কে পড়ুন-আপনার পছন্দের সঙ্গে মিলছে কি না দেখুন। সংশ্লিষ্ট পেশায় সদ্য প্রবেশ করা মানুষদের সঙ্গে কথা বলুন। নতুন শহরে যাওয়ার আগে সেখানে ঘুরে দেখুন, ভাড়া ও পরিবেশ বুঝে নিন।
শুধু বেতন নয়, ভালো প্রশিক্ষণ ও মেন্টরশিপ পাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এমন চাকরি বেছে নিন, যেখানে শেখার সুযোগ থাকবে এবং ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারে তা কাজে আসবে।
একটি চাকরি যেখানে আপনি সুখী নন, সেটি জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ হয়ে দাঁড়াতে পারে। “যেকোনোভাবে কোম্পানিতে ঢুকে পড়ি”-এই মানসিকতা দীর্ঘমেয়াদে হতাশা সৃষ্টি করতে পারে।
চূড়ান্তভাবে, আপনি যে জায়গায় কাজ করবেন, সেটি: আপনার জন্য উপযুক্ত কি না, প্রতিদিন কাজ করতে আগ্রহ জাগায় কি না, ম্যানেজার কতটা সহায়ক, পদোন্নতির সুযোগ আছে কি না
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে নিলে আপনি গড়তে পারবেন একটি সফল এবং আনন্দদায়ক ভবিষ্যৎ।
মিরাজ খান