
ছবি সংগ্রহীত
যখন কোনো নারী জানতে পারেন, তার ভেতরে একটি নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে, তখনই তার জীবনের এক অনন্য অধ্যায়ের সূচনা হয়। গর্ভে একটি সন্তান ধারণ মানে শুধু একটি জীবন গঠনের নয়, বরং একটি নতুন ভবিষ্যতের বীজ বপনের মতোই। মাতৃত্ব প্রতিটি নারীর জীবনের এক গর্বিত, সংবেদনশীল ও পূর্ণতার অধ্যায়। অথচ এই গর্ভধারণের মুহূর্ত থেকেই একজন নারীর জন্য যে শারীরিক ও মানসিক পরিচর্যার দরকার, তা আমাদের সমাজে খুব কম মানুষই গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেন। বাংলাদেশের বাস্তবতায় দেখা যায়, হবু মায়ের প্রতি যত্ন ও সহানুভূতির ঘাটতি ব্যাপক। সন্তান গর্ভে আসার পরপরই সঠিক চিকিৎসা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা শুরু হয়।
প্রথমেই আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে জানা দরকার শিশুর মস্তিষ্ক, হৃদস্পন্দন ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিকভাবে গঠিত হচ্ছে কিনা। সময়মতো এই পরীক্ষা না করালে গর্ভস্থ সন্তানের জটিলতা সঠিক সময়ে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। গর্ভাবস্থার ৫-৬ মাসের দিকে মায়ের শরীরে দৃশ্যমান পরিবর্তন আসে। এই সময় আরামদায়ক, ঢিলেঢালা পোশাক ব্যবহার, ভারী কাজ থেকে বিরত থাকা এবং প্রতিদিন রাতে অন্তত ৬ ঘণ্টা ও দিনে ২ ঘণ্টা বিশ্রামের ব্যবস্থা জরুরি। এই সময় সন্তান দ্রুত বেড়ে ওঠে, তাই মায়ের শরীরেও ক্লান্তি ও অস্থিরতা দেখা দেয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টি নিশ্চিত না হলে তা মায়ের শরীর ও গর্ভস্থ শিশুর উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এ সময়টায় হবু মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি পরিবারের বিশেষ মনোযোগ দেওয়া দরকার। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সহানুভূতি ও সহমর্মিতা থাকা একান্ত প্রয়োজন। একটুও কটু কথা, উপেক্ষা বা মানসিক চাপে থাকলে মায়ের শরীরে কর্টিসল হরমোন বেড়ে যায়, যা শিশুর মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় মায়ের মানসিক চাপ ভবিষ্যতের শিশুর মধ্যে উদ্বেগ, জেদ ও মনোযোগের সমস্যার জন্ম দিতে পারে।একজন গর্ভবতী নারীর পরিচর্যা শুধু তার একার নয় এটি একটি পরিবারের, একটি সমাজের দায়িত্ব। একটি সুস্থ জাতি গঠনের সূচনা হয় একজন সুস্থ, মানসিকভাবে প্রশান্ত মায়ের মাধ্যমেই। তাই চলুন, আমরা প্রত্যেকে হবু মায়েদের প্রতি যত্নবান হই তাদের পরিচর্যায় ভালোবাসা, সহানুভূতি ও দায়িত্ববোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করি।
কবি নজরুল সরকারি কলেজ, ঢাকা থেকে
প্যানেল