
নারী জীবনে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলো বিবাহিত নারী এক সময় সন্তানসম্ভবা হবে, গর্ভধারণ করবে। একটি নির্দিষ্ট সময় পরে প্রসবের মাধ্যমে তার কোলজুড়ে একটি ফুটফুটে বাচ্চা আসবে। এমনটাই কাম্য। এভাবেই নারী জীবনে মাতৃত্বের প্রকাশ। এতেই তার জীবনের পূর্ণতা পায়। সন্তানসম্ভবা নারীর জন্য গর্ভকালীন এবং প্রসব পরবর্তী সঠিক পরিচর্যা, যত্ন খুবই জরুরি। আর এর জন্য স্বামীসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের ভূমিকা অত্যাবশ্যক। আমাদের দেশে সন্তানসম্ভবা, গর্ভবতী নারীর সঠিক পরিচর্যা, যত্নের অভাবে অনেক নারী অনেক যন্ত্রণা ভোগ করে। ক্ষেত্রভেদে অনেক সময় নারী জীবন বিপন্ন হয়। যা মোটেও কাম্য নয়। গর্ভধারণ থেকে শুরু করে প্রসবের পর ৪২ দিন পর্যন্ত গর্ভজনিত বা প্রসবজনিত জটিলতায় যদি কোনো নারী মৃত্যুবরণ করে তাকে মাতৃমৃত্যু বলে। আমাদের দেশে এসব অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর হার এখনো অনেক বেশি। পারিবারিক সচেতনতাই পারে নারীর এ হেন মৃত্যু রোধ করতে। এর জন্য দরকার পারিবারিক সচেতনতা। সন্তানসম্ভবা, গর্ভবতী নারীর যত্ন নিশ্চিত করতে যা প্রয়োজন, গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই নারীকে বিশেষ যত্নের আওতায় আনতে হবে। তাকে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার, বাড়তি খাবার দিতে হবে। দিনে কমপক্ষে ৪বার খেতে হবে। গর্ভের ৪ মাস থেকে ৯ মাসের মধ্যে কমপক্ষে ৪ বার ডাক্তার, নিকটস্থ হাসপাতালে চেকআপ করানো জরুরি। যাকে ডাক্তারি ভাষায় এএনসি (এন্টিনেটাল) কেয়ার বলে। আবার প্রসবের পরও ৪২ দিনের মধ্যে পুনরায় ৪ বার চেকআপে যেতে হবে যাকে পিএনসি (পোস্ট নেটাল কেয়ার) বলে। গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ শিশুকে ধনুষ্টংকারের হাত থেকে বাঁচাতে গর্ভবতী নারীকে শিডিউল অনুযায়ী ৫ ডোজ টিটি টিকা দিতে হবে। সন্তানসম্ভবা নারীকে ভারী কাজ থেকে বিরত রাখা বাঞ্ছনীয়। হালকা ব্যায়াম, করা যেতে পারে। শারীরিক, মানসিকভাবে তাকে সুস্থ রাখা পরিবারের অন্যতম দায়িত্ব। সন্তানসম্ভবা নারীর জন্য আগে থেকেই প্রসব পরিকল্পনা করে নেওয়া প্রয়োজন। কোথায় কে প্রসব করাবেন তা ঠিক করা উচিত। অবশ্যই হাসপাতালে দক্ষ হাতে প্রসব করানো দরকার। আমাদের দেশে এখনো বাড়িতে অদক্ষ দাই, ধাত্রী দ্বারা প্রসব করানো হয়। যা অনেক সময় নারীজীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। মাতৃমৃত্যুর একটি অন্যতম কারণ হলো বাড়িতে প্রসব। গর্ভাবস্থা, সন্তানসম্ভবা নারীর ৫টি বিপদ চিহ্ন রয়েছে। যেমন মাথাব্যথা, খিঁচুনি, চোখে ঝাপসা দেখা, রক্তপাত, বিলম্বিত প্রসব এগুলোর যে কোনো একটি দেখা দিলেই কালবিলম্ব না করে তাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে। প্রসবের পর প্রসূতিকে ৪২ দিনের মধ্যে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ভিটামিন এ খাওয়াতে হবে। পারিবারিক অজ্ঞতা, অসচেতনতা, কুসংস্কার সন্তানসম্ভবা নারীর জন্য হুমকি। এসব থেকে বেরিয়ে এসে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের উচিত সন্তানসম্ভবা, গর্ভবতী নারীর দিকে সবিশেষ যত্ন নেওয়া। সঠিক পরিচর্যা ও প্রয়োজনীয় যত্নশীল হয়ে সন্তানসম্ভবা নারী, গর্ভবতী নারীর সুখপ্রসব নিশ্চিত করায় প্রতিটি পরিবার সচেতন থাকুক। সন্তান ধারণের মধ্য দিয়েই নারী জীবন পূর্ণতা পায়। নিরাপদ মাতৃত্ব নারীর অধিকার। এ অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিটি পরিবারকে সচেষ্ট থাকতে হবে। নিজে সচেতন হই অন্যকে সচেতন করি। নিরাপদ মাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করি।
নেত্রকোনা থেকে
প্যানেল