
মেয়ে থেকে মা হওয়া সহজ নয়। দীর্ঘ নয় মাস জীবনের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয় নারীকে। অনাগত সন্তানের জন্ম নিয়ে নানা যন্ত্রণা আর অপমানের জ্বালা এই নারীকে সহ্য করতে হয়। কখনো পরিবারের গঞ্জনা, কখনো স্বামীর অবজ্ঞা, সবই জুটে নারীর ভাগ্যে। অথচ পরিবারের সাহচর্যে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর জীবন সুখের ঠিকানায় পরিণত হতে পারে। আমাদের পুরুষশাসিত সমাজে নারীকেই কেন সব গঞ্জনার মুখোমুখি হতে হয় বলতে পারেন? অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় একজন নারীর মনে অজানা ভয়ে জর্জরিত থাকে। অনাগত সন্তানের জন্মের কথা ভেবে নারী অসহায় হয়ে সবকিছু নীরবে নিভৃতে মেনে নেয়। পরিবার কিংবা স্বামীর সান্নিধ্য কিংবা সকলের সহযোগিতায় সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। প্রতিটি নারী গর্ভাবস্থায় একই সমস্যায় ভোগে তা কিন্তু নয়। গর্ভাবস্থায় একজন নারীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা তার সারাজীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ে। মানুষ দুঃসময়ের ঘটনা কখনো মুছে ফেলতে পারে না। কেউ অল্পে দুর্বল কেউ বা কর্মে ব্যস্ত। নারীর শারীরিক ও মানসিক দিক বিবেচনা করে সারাদিনের চলাফেরা, বিশ্রাম নির্ভর করে। নতুনের আগমন, আনন্দে বিচরণ, পরিবারের ভালোবাসা একান্ত কাম্য অনাগত শিশুর জন্য। এই সুন্দর পৃথিবীতে বসবাসের অধিকার তারও আছে। পরিবারের চাপে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে ও পারে না। মা বাবা কিংবা শ্বশুরবাড়িতে যদি কারও সাহায্য না পায়, তাহলে গর্ভাবস্থায় তার চেয়ে অসহায় আর কে। শারীরিক ও মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে পারলেই কেবল জীবনের প্রতিটি ধাপে সুখের প্রত্যাশা। সন্তান কখন কোথায় কীভাবে জন্ম নিবে তার চিন্তাও মাথায় রাখতে হয়। সন্তান জন্মানোর পূর্বে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। সন্তান ছেলে কিংবা মেয়ে হবে তার জন্য ও পরিবারের সদস্যদের খোঁটা শুনতে হয় একজন নারীকে। সন্তান ছেলে কিংবা মেয়ে হবে এর দায়ভার কি আসলেই নারীর ওপর বর্তায়? অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় একজন নারীর প্রতি যত্নশীল ও সহনশীল হওয়া প্রতিটি পরিবারের দায়িত্ব। শারীরিক ও মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে ও সাহায্য করা উচিত। গর্ভাবস্থায় একজন নারী যতটা হাসিখুশি থাকবে, তার মনে ততোটা শান্তি বিরাজ করবে। চাকরিজীবী নারীর জীবন ও আরও দুর্বিষহ, ঘরের কাজ সামলিয়ে তারপরে তো অফিস কিংবা বাইরের কাজ। নিরাপদ প্রসব নিশ্চিত করাও পরিবারের দায়িত্ব। কেননা এই অবস্থায় একজন নারীর মনে যতটা না ভয় বিরাজ করে, তার চেয়ে বেশি ভয়ে থাকে সন্তান ছেলে কিংবা মেয়ে, নাকি সুস্থ কিংবা অস্বাভাবিকভাবে জন্ম নিবে। কেননা সব দায়ভার এই সমাজ নারীর ওপর চাপিয়ে দিতে দুবার ভাবে না। আসুন নারীর প্রতি সম্মানের দৃষ্টি প্রদর্শন করি। মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ প্রতিটি নারীর স্বপ্ন।
উত্তরা, ঢাকা থেকে
প্যানেল