ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পোশাক রপ্তানি  বিষয়ে দিল্লিকে  চিঠি দেবে  ঢাকা

কূটনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০১:৩০, ২২ মে ২০২৫

পোশাক রপ্তানি  বিষয়ে দিল্লিকে  চিঠি দেবে  ঢাকা

পোশাক রপ্তানি  বিষয়ে দিল্লিকে  চিঠি

ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি বন্ধের বিষয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা  মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হচ্ছে। এটি বাণিজ্য উপদেষ্টা দেখছেন। এদিকে পররাষ্ট্র সচিবের চলে যাওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অপসারণ নয়, নিজে থেকেই অন্য দায়িত্বে চলে যেতে চান পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন। আগামী দু’একদিনের মধ্যে দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন তিনি। এর পর নতুন পররাষ্ট্র সচিব কে হবেন সেটিও আগামী দু’একদিনের মধ্যে জানাবে সরকার। একইসঙ্গে পুশইন করা সকল ভারতীয় নাগরিককে ফেরত নিতে হবে। বুধবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
জসীম উদ্দিনের পরির্বতন নিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, পররাষ্ট্র সচিব বিভিন্ন কারণে নিজে থেকে এখান থেকে সরে যেতে চান। সরে যেতে চান মানে এই দায়িত্ব থেকে চলে যেতে চান। আমরা তাকে সরে যেতে দিচ্ছি। তিনি আগামী দু’একদিনের মধ্যে দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন।
পররাষ্ট্র সচিব জসীম ছুটিতে যাবেন নাকি চাকরি ছাড়ছেন, জানতে- চাইলে উপদেষ্টা বলেন, তিনি চাকরি ছেড়ে দেবেন কেন? চাকরি আছে। তাঁর দায়িত্ব পরিবর্তন হবে। পররাষ্ট্র সচিব সরে যাচ্ছেন কেন আর আপনারা কেন তাকে সরে যেতে দিচ্ছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা আসলে ঠিক ব্যাখ্যা করার মতো বিষয় না। বিভিন্ন কারণে মানুষ দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করে এবং তেমন কোনো কারণ।
পররাষ্ট্রস চিবের পরিবর্তনের সঙ্গে বাইরের চাপ নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, যে কোনো সিদ্ধান্তের পেছনে অনেকের স্বার্থ, তাদের বিভিন্ন মতামত এগুলো থাকে। কখনো কোনো সিদ্ধান্ত কোনো একজনে নিয়ে নেয় না। এর বিবেচনায় অনেক সময় সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও হয়, দেখা যাক। নতুন পররাষ্ট্র সচিব কে হচ্ছেন জানতে চাইলে উপদেষ্টা তার নাম বলেননি। তিনি বলেনে, দু’একদিনের সেটা আপনারা জানতে পারবেন।
এদিকে সাবেক রাষ্ট্রদূত সফিউর রহমানকে অন্তর্বর্তী সরকার গত ২০ এপ্রিল প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে এক মাস পার হয়েও গেলেও তিনি এখনো দায়িত্ব শুরু করতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, তিনি এখন পর্যন্ত যোগ দেননি। সরকারের সিদ্ধান্ত যখন হবে তখন যোগ দেবেন বা দেবেন না।
সফিউর রহমান তার দায়িত্বে যোগ দিতে কোনো সমস্যা আছে কি না, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, জয়েন করতে সমস্যার প্রশ্ন না। এ ব্যাপারে কিছু চিন্তা-ভাবনা আরও চলছে। তার দায়িত্ব পরিবর্তন বা কোনো কিছু। সেটা যথা সময়ে আপনারা জানতে পারবেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পুশইন করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে। তাদের পুশব্যাক করার বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, তা জানা নেই পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের। তবে তিনি বলেন, ‘যারা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণিত, তাদের অবশ্যই ফেরত নিতে হবে।
পুশইন করার বিষয়ে দিল্লিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং এটি বন্ধে বাংলাদেশ যোগাযোগ করছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দিল্লির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে এবং আমরা চেষ্টা করছি নিয়মের বাইরে যেন কিছু না ঘটে।’
ভারতের কাছ থেকে কী প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে- প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, একদিনের মধ্যে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে, এটি আমরা প্রত্যাশা করি না। তারা তাদের অবস্থান কিছুটা জানিয়েছে। আমরা আমাদের অবস্থান তাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছি এভাবে দেওয়াটা (ঠেলে পাঠানো) ঠিক না। আমরা বলছি যে, আমাদের একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর আছে। সেই প্রসিডিওর অনুযায়ী আমরা যাব। তারা তালিকা দিয়েছে। আমরা সেই তালিকাগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা করছি।
ভারতের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো পর্যালোচনার বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ছোট ছোট বিভিন্ন চুক্তি বিভিন্ন সময়ে হয়েছে, সমঝোতা স্মারক হয়েছে এবং সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে আপনাদেরকে জানানো হয়েছে গত অনেক বছরের মধ্যে। তার মধ্যে চুক্তিগুলো দুপক্ষের সম্মতিতে বাতিল করতে হবে, অথবা প্রভিশন থাকে যে, যেকোনো একপক্ষ যদি আপত্তি করে, তবে বাতিল করা যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা বাতিল কোনোটিই করিনি। আমরা আসলে চাই যে, নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু এগিয়ে যাক।
ভারতের সঙ্গে চুক্তিগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এবং আমাদের কোথায় সমস্যা আছে, সেটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি এবং সময়মতো সেগুলো ভারতের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে তিনি জানান।
ভারত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নিয়মকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। এখন ইতিবাচকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়, নেতিবাচকভাবেও ব্যাখ্যা করা যায় কখনো কখনো। সব মিলিয়ে আমাদের সেভাবেই এগোতে হচ্ছে। কেউতো স্বীকার করে না যে, সে নিয়মের বাইরে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। নতুন সরকার গঠনের মাস খানেকের মাথায় তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে সরকার। তার স্থলে নতুন পররাষ্ট্র সচিব করা হয় তৎকালীন চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জসীম উদ্দিনকে। তার চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালের ১২ ডিসেম্বর। অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে একটি দেশের রাষ্ট্রদূত করার প্রস্তাব দিলেও তিনি নিজ সিদ্ধান্তে পূর্ণাঙ্গ সময় চাকরি শেষ না করেই ছুটিতে যাচ্ছেন। 
চীনে রাষ্ট্রদূত হওয়ার আগে জসীম উদ্দিন কাতার এবং গ্রিসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন নয়াদিল্লি, টোকিও, ওয়াশিংটন ডিসি এবং ইসলামাবাদেও বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অনুবিভাগের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন তিনি। কনস্যুলার পরিষেবায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনায় রাষ্ট্রদূত জসীম উদ্দিনের নেতৃত্বে এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাস ২০১৮ সালে জনপ্রশাসন পুরস্কার পান।

আরো পড়ুন  

×