
ছবিঃ সংগৃহীত
বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রের মুখোশধারী দেশ হিসেবে পরিচিত ভারত এবার পড়েছে অস্বস্তিকর এক কূটনৈতিক সংকটে।
স্থানীয় সময় সোমবার (১৯ মে), ওয়াশিংটন থেকে ভারতের দিকে ছোড়া হয়েছে এক কড়া বার্তা—যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর একাধিক ভারতীয় ভ্রমণ সংস্থার মালিক, নির্বাহী ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আরোপ করেছে ভিসা নিষেধাজ্ঞা।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, মানব পাচার ও অবৈধ অভিবাসনে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছিল এসব সংস্থা। স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, ভারতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলো প্রতিদিনই এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার জন্য কাজ করছে এবং যারা ইচ্ছাকৃতভাবে এসব কার্যক্রমে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে কঠোর পদক্ষেপ।
আ. লীগ নেতাদের আশ্রয় ঘিরেই চাপে ভারত
বিশ্লেষকদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞার পেছনে রয়েছে একটি বিস্তৃত রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ। যার কেন্দ্রে রয়েছেন বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতারা। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এখন কঠোর অবস্থানে গেছে ভারত সরকার। পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশে আশ্রিত এই নেতারা গত নয় মাস ধরে রাজনৈতিক অভয়ারণ্য খুঁজলেও এখন পাচ্ছেন না আশ্রয়।
ভারতীয় প্রশাসন সাফ জানিয়ে দিয়েছে—বিদেশি অবৈধ নাগরিকদের আর ঠাঁই নেই। যার ফলে শুরু হয়েছে পুশব্যাক এবং আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বহু নেতা-কর্মী। প্রশ্ন উঠেছে—এত বিপুল সংখ্যক নেতা এখন যাবে কোথায়?
আশ্রয়ের খোঁজে যুক্তরাষ্ট্রমুখী নেতারা, নজরে পাচার চক্র
এই সংকট ঘিরে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিছু ভারতীয় ট্র্যাভেল এজেন্সি। যারা অর্থের বিনিময়ে এই নেতা-কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশে পাচারের পথ তৈরি করছে। সূত্র বলছে, ইতোমধ্যেই অন্তত ৫০ জনের বেশি নেতা সফলভাবে আমেরিকা ও ইউরোপে প্রবেশ করেছেন। বাকিরাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা আসলে মানবপাচারবিরোধী সাধারণ পদক্ষেপ নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত সুরক্ষা ব্যারিকেড—যার মাধ্যমে বাংলাদেশি রাজনীতিকদের অনুপ্রবেশ ঠেকানো হচ্ছে।
মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন, কূটনৈতিক চাপে ভারত
এদিকে ভারতের জন্য দিনগুলো যেন একের পর এক খারাপই যাচ্ছে। পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা যোগ হয়েছে নতুন দুশ্চিন্তা হিসেবে। ট্রাম্প-মোদি যুগে সম্পর্কের যে উষ্ণতা ছিল, তা এখন যেন ফিকে। জার্মানি, কানাডা ও জাতিসংঘের সঙ্গে নানা ইস্যুতে দ্বন্দ্বের পর এবার যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা কূটনীতিতে ভারতের জন্য বড় ধাক্কা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিদেশে আশ্রয় দেওয়া নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘিরে ভারত এখন নিজেই পড়েছে এক বিব্রতকর অবস্থানে।
ইমরান