
ছবি: সংগৃহীত।
ফল-সবজির গায়ে ছোট ছোট রঙিন স্টিকার—দেখতে যেমন নিরীহ, তেমনি অনেকের কাছে আধুনিক বাজার ব্যবস্থার স্বাভাবিক চিহ্ন। কিন্তু জানেন কি, এই স্টিকারগুলো শুধু ফল-সবজির গুণগত মান নয়, বরং আপনার স্বাস্থ্যঝুঁকির বার্তাও বয়ে আনতে পারে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুল উপায়ে ধুয়ে না খেলে বা স্টিকারসহ ফল-সবজি খেয়ে ফেললে শরীরে প্রবেশ করতে পারে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান। ফলে বাড়তে পারে ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগের ঝুঁকি।
আজকাল বাজার থেকে আনা প্রায় সব ফল-সবজির গায়ে স্টিকার দেখা যায়। এর মধ্যে অনেকেই স্টিকারগুলো উপেক্ষা করে ফল ধুয়ে বা কখনও ধোয়াও না করে সরাসরি খেয়ে ফেলেন। অথচ এই স্টিকারগুলোর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে বিপদের একটি অদৃশ্য ছায়া।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফল-সবজিতে লাগানো স্টিকার সাধারণত পিভিসি বা ভিনাইল জাতীয় প্লাস্টিক উপাদানে তৈরি, যার পেছনে ব্যবহৃত হয় অ্যাডহেসিভ বা আঠালো রাসায়নিক। এই আঠা বা স্টিকার থেকে নির্গত হতে পারে বিষাক্ত রাসায়নিক, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। দীর্ঘমেয়াদে এসব উপাদান শরীরে জমতে থাকলে দেখা দিতে পারে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, কিডনি বা লিভারের সমস্যা, এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও।
আরেকটি দিক হলো স্টিকার দিয়ে আসলে বোঝানো হয় সেই ফলটি জেনেটিক্যালি মডিফায়েড (GMO), কীটনাশকযুক্ত, না কি প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত। উদাহরণস্বরূপ, অনেক স্টিকারে চার অঙ্কের কোড থাকে—যেমন ৪০১১ যেটি কলার জন্য ব্যবহৃত হয়। যদি কোডটি ৮ দিয়ে শুরু হয়, তবে তা GMO। আর যদি ৯ দিয়ে শুরু হয়, তবে বুঝতে হবে সেটি অর্গানিক। কিন্তু বেশিরভাগ সাধারণ ক্রেতাই এই কোডের তাৎপর্য জানেন না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুষ্টিবিদ ডা. সামিরা রহমান জানান, “ফল-সবজি খাওয়ার আগে শুধু পানিতে ধুলেই হবে না, স্টিকার ভালো করে তুলে ফেলতে হবে এবং সেই অংশটি একটু ঘষে ধুয়ে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। অনেকে আবার ফল কাটার সময় স্টিকার লাগানো অংশ বাদ না দিয়েই খেয়ে ফেলেন, যা একদমই নিরাপদ নয়।”
এছাড়া বাজারে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে ফল পাকাতে স্টিকার লাগিয়ে থাকে ‘ব্র্যান্ডেড’ ভেবে বেশি দামে বিক্রি করতে। এসব স্টিকারে ব্যবহৃত রঙ বা আঠা খাবার উপযোগী নয়।
কী করবেন আপনি?
- ফল-সবজি কেনার পর ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন—স্টিকার থাকলে তা তুলে ফেলুন
- স্টিকার লাগানো অংশটি আলাদা করে ধুয়ে বা ছেঁটে ফেলুন
- ঘরে ফিরে শুধু পানি নয়, বরং সামান্য ভিনেগার বা বেকিং সোডা দিয়ে ধোয়া যেতে পারে
- অর্গানিক বা লোকাল উৎস থেকে ফল-সবজি কেনার চেষ্টা করুন
স্টিকার মানেই বিপদ নয়, তবে অসচেতনতা থেকেই বিপদ জন্ম নেয়। সচেতনভাবে স্টিকার ব্যবহারের কারণ ও তা অপসারণের নিয়ম জানলে আপনি নিজে এবং পরিবার—দু’জনকেই রাখতে পারবেন নিরাপদ। স্বাস্থ্যই সম্পদ, আর তার সুরক্ষার শুরু হোক এক টুকরো স্টিকার সরিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়েই।
নুসরাত