
শারজায় বাংলাদেশের বোলারদের তুলোধোনা করে ৮২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন সংযুক্ত আরব আমিরাত অধিনায়ক মুহাম্মাদ ওয়াসিম
গত বছর টি২০ বিশ্বকাপের আগের ঘটনা। ঢাল-তলোয়ারে শান দিতে নেমে হিউস্টনে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ২-১এ সিরিজ হেরে বসে বাংলাদেশ। এবার পাকিস্তান সফর সামনে রেখে শারজায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে সিরিজটা ছিল দুই ম্যাচের। প্রথম ম্যাচ জিতে এগিয়ে গেলেও দ্বিতীয় ম্যাচেই হেরে বসে লিটন দাসের দল। ভাগ্যিস মধ্য পথে অতিরিক্ত আরেকটা ম্যাচ যুক্ত হয়েছিল। জিতলে প্রশংসা নেই, হারলে মান সম্মান শেষ- এই ধরনের সিরিজগুলোকে আসলে ‘মাইনকার চিপা’ পরিস্থিতি বলা যায়!
২০৫ রানের বড় পুঁজি নিয়েও হারের অজুহাত খোঁজা অধিনায়ক শিশিরকে দায়ী করেছেন। বলছেন ম্যাচের দ্বিতীয় ভাগে ব্যাটিং যতটা সহজ, বোলিং-ফিল্ডিং ততটাই কঠিন। অন্যদিকে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ২ উইকেটের নাটকীয় জয়ে সিরিজ স্বাগতিক আমিরাত অধিনায়ক মোহাম্মদ ওয়াসিম এখন জিততে আত্মবিশ্বাসী। শারজায় আজ নয়টায় শুরু ফয়সালার শেষ ম্যাচ।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ৭ ওভারের প্রতিটিতেই বাউন্ডারি মারেন আরব আমিরাতের ওপেনাররা। প্রথম ১০ ওভারে তারা করে ফেলে ১০৭ রান। পানি বিরতির পর টানা দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচে ফেরার সম্ভাবনা জাগায় বাংলাদেশ। তবু ওয়াসিমের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে চাপে পড়েনি আরব আমিরাত। এক পর্যায়ে সমীকরণ দাঁড়ায় ৩৬ বলে ৬০ রান। সেখান থেকে প্রতি ওভারে একটি করে উইকেট নেয় বাংলাদেশ। শেষ দিকে মাত্র ৩ উইকেট বাকি থাকতে ১১ বলে ২৯ রান প্রয়োজন ছিল স্বাগতিকদের।
কিন্তু তালগোল পাকিয়ে ওভারের শেষ ৫ বলে ১৭ রান দিয়ে ফেলেন শরিফুল ইসলাম। পরে শেষ ওভারে ওয়াইড-নো মিলিয়ে ৫ বলেই বাকি ১২ রান দেন তানজিম হাসান। আইপিএল খেলতে মুস্তাফিজুর রহমান ভারতে উড়ে যাওয়ায় ম্যাচে তার অভাব বোধ করেছে বাংলাদেশ। ‘যে কোনো পরাজয়ই বেদনাদায়ক। তবু আমরা এই উইকেটে ভালো ব্যাটিং করেছি। উইকেট খুব ভালো ছিল। আমার মনে হয়েছে, ব্যাটিংয়ের সময় তারা শিশিরের সুবিধাটা পেয়েছে। তার পরও আমরা চেষ্টা করেছি। তবে ফিল্ডিং ও মাঝের ওভারের বোলিংয়ের আমরা কিছু ভুল করেছি।’ বলছিলেন লিটন।
আন্তর্জাতিক টি২০তে আরব আমিরাতের মাঠে প্রায় ১৬ বছরে ২৬৫ ম্যাচে এবারই প্রথম কোনো দল দুইশ’র বেশি রান তাড়া করে জয়ের স্বাদ পেল। আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশের বিপক্ষে যে কোনো সহযোগী দেশের এটিই সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়। ২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৯১ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল তখনো টেস্ট স্ট্যাটাস না পাওয়া আফগানিস্তান।
অধিনায়ক লিটন বলেন, ‘বুঝতে হবে যে, এই ধরনের ছোট মাঠে খেলার সময় শিশিরের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তাই বোলিংয়ের সময় হিসেবি হতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন ব্যাটসম্যানের জন্য আলাদা পরিকল্পনা করতে হবে।’ যার অর্থ শারজায় টস বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র ৪২ বলে ৯ চার ও ৫ ছক্কায় ৮২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন ওয়াসিম। ভাষাহীন আমিরাত অধিনায়ক, ‘আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
বাংলাদেশকে হারিয়ে দারুণ লাগছে। আমি সবাইকে বিশ্বাস দিচ্ছিলাম, এই রান তাড়া সম্ভব কারণ আমরা এই কন্ডিশন চিনি।’ টি২০ সংস্করণে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন ওয়াসিম। ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর আন্তর্জাতিক টি২০তে অভিষেকের পর থেকে এখনো পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই সংস্করণে তার চেয়ে বেশি রান করেনি আর কেউ। গত দুই ম্যাচে ওয়াসিমের ব্যাটের উত্তাপ টের পেয়েছে বাংলাদেশ।
টানা দুই ম্যাচে ফিফটি পেয়েছেন পাকিস্তান থেকে আমিরাতে পাড়ি জমানো এই ক্রিকেটার। সমতায় ফেরার পর এবার বাংলাদেশকে সিরিজ হারানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি, ‘আমরা শেষ ম্যাচে নিজেদের সেরাটা খেলব এবং জয়ের জন্যই মাঠে নাম। লক্ষ্য থাকবে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জেতার।’
টি২০তে টেস্ট প্লেয়িং কোনো দেশের বিপক্ষে আমিরাতের দ্বিতীয় জয় এটি। এর আগে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছিল তারা। এবার তারা সিরিজ জয়ের স্বপ্নে বিভোর। এই সিরিজের আগে তিন ম্যাচ খেলে সব ক’টিতেই জিতেছিল বাংলাদেশ। টানা চার জয়ের পর পঞ্চম ম্যাচে এসে হার। সামান্য চোট সমস্যার কারণে প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান পারভেজ হোসেনকে দ্বিতীয় ম্যাচে নামায়নি বাংলাদেশ। সিরিজ জিতে মান বাঁচানোর ম্যাচে তিনি খেলনে কি না, সেটিই দেখার অপেক্ষা।