
ছবি:সংগৃহীত
ট্রেনের দরজার হাতল ধরে প্রাণপণ বেঁচে থাকার চেষ্টা করা এক ব্যক্তির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি চলন্ত ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ার উপক্রম হলেও শেষ মুহূর্তে কোনোভাবে দরজার হাতল ধরে বেঁচে যান। সেই ব্যক্তির নাম মতিউর রহমান, বাড়ি নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলার পারলোইল গ্রামে। ঘটনা ঘটে বগুড়ার নরসরদপুর রেলস্টেশন এলাকায়।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর অনেকেই মনে করেছিলেন, মতিউর রহমান হয়তো আর বেঁচে নেই। তবে বাস্তবে তিনি এখনো জীবিত এবং ঘটনার ভয়াবহ বিবরণ নিজেই সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, "আমি যখন ট্রেনের দরজার হাতল ধরে ছিলাম, তখন পেছনে থাকা কয়েকজন আমার ওপর চড়াও হয়। তারা মিথ্যা অভিযোগ তোলে যে আমি নাকি মোবাইল চুরি করেছি। এরপরই শুরু হয় নির্যাতন। তারা আমাকে চড়-থাপ্পড়, লাথি মারতে থাকে এবং পকেটে থাকা ৫০ হাজার টাকা কেড়ে নেয়।"
মতিউরের ভাষ্যমতে, তিনি কোনো অপরাধ করেননি। যারা তাকে মারধর করেছে, তারা মুখে মাস্ক পরে ছিল এবং তাদের মধ্যে একজনকে তিনি চিনতে পেরেছেন। নির্যাতনের পর এক পর্যায়ে চলন্ত ট্রেন থেকে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। তিনি জানান, “স্টেশন পাওয়ার আগেই ওরা আমার হাতটা ছেড়ে দেয়। আমি ঘুরতে ঘুরতে ট্রেনের নিচে পড়ে যাই, তখন মনে হচ্ছিল আমি আর বাঁচবো না। কিন্তু আল্লাহর রহমতে দুই পা টেনে বাইরে চলে আসতে পারি।”
তিনি আরও বলেন, ট্রেন চলার সময় তার পিঠে দরজার আঘাত লেগেছে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা পেয়েছেন। এরপরও তিনি কোনোরকমে বেঁচে ফিরে আসেন। ঘটনার পর তিনি বিভিন্ন থানায় অভিযোগ করতে গেলে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে হয় তাকে। অবশেষে তিনি কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন এবং এখন মামলাটি গাজীপুর জিআরপি থানায় গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে মতিউরের পরিবার এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে এবং অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
এই ঘটনার মাধ্যমে ট্রেনে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। মতিউর রহমানের মতো কেউ যেন আর এভাবে নির্যাতনের শিকার না হন, সেজন্য দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষও।
আঁখি