
২০০২ সালে সবশেষ এভাবে বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন ব্রাজিলের ফুটবলাররা
ফুটবলের দেশ হিসেবে পরিচিত ব্রাজিল, এই কথাটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ফুটবলকে যদি শিল্প ধরা হয় তাহলে সেই শিল্পী লাতিন ফুটবলাররা। আর তাদের গানের সুরে মগ্ন হয়েছেন কোটি কোটি ফুটবল ভক্ত। যুগে যুগে জার্জিনহো, পেলে, রোমারিও, রোনালদো, রোনালদিনহো, কার্লোস আলবার্তো পেরেইরা হয়ে ওঠেন বিশ্ব ফুটবলের আইকন। তাদের অবিশ^াস্য পারফরম্যান্সে ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০, ১৯৯৪ আর সবশেষ ২০০২ সালে শিরোপা উঁচিয়ে ছিল সেলেসাওরা।
কিন্তু আর কত এই এক গল্প? শেষ শিরোপার দেখা পেয়েছিল ২৩ বছর আগে। এরমধ্যে আরও পাঁচটি বিশ^কাপ শেষ হলেও শিরোপা তো দূরের কথা একটিতে ফাইনালেও উঠতে পারেনি ব্রাজিল। একবার শেষ চারে উঠলেও বাকি চারবার বিদায় নিতে হয়েছে শেষ আট থেকে। অথচ বর্তমান ব্রাজিল মাঠের খেলায় পিছিয়ে থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেক্সা মিশনের স্বপ্নে বিভোর তাদের সমর্থকরা।
তবে বিশ্ব ফুটবলে এবার নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে যাচ্ছে। রিয়াল মাদ্রিদকে বিদায় জানিয়ে কিংবদন্তি কোচ কার্লো আনচেলত্তি দায়িত্ব নিলেন ব্র্রাজিল দলের। এতে নতুন করে আরও একবার জেগে উঠেছে হেক্সা মিশনের স্বপ্ন! যদিও ইতিহাস বলছে ভিন্ন কথা। বিশ^ ফুটবলে বিদেশী কোচ নিয়ে এখন পর্যন্ত কেউ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। তারপরও ৬৫ বছর বয়সী ইতালিয়ান কোচ কার্লো আনচেলত্তিকে ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত নিয়োগ দিয়েছে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ)।
সিবিএফ সভাপতি এডনাল্ডো রদ্রিগেজ এক্স হ্যান্ডেলের এক পোস্টে জানিয়েছে, ‘কার্লো আনচেলত্তিকে ব্রাজিলের কোচ হিসেবে নিয়ে আসা শুধু একটি কৌশলগত পদক্ষেপ নয়, আমরা যে আবারও শীর্ষে ফিরে যাওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, বিশ্বের প্রতি এটি একটি বার্তাও। একসঙ্গে আমরা ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের নতুন গৌরবময় অধ্যায় রচনা করব।’
আগামী ২৬ মে থেকে আনচেলত্তি কাগজে-কলমে ব্রাজিলের কোচ। কিন্তু এখনই দল গোছানোর কাজে মন দিতে চান না এই ইতালিয়ান কোচ। তিনি বলেন, ‘২৬ মে থেকে আমি ব্রাজিলের কোচ। তখন তাদের জন্য অনুভূতিটাও কাজ করবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ একটা চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এখনো আমি রিয়াল মাদ্রিদের কোচ। এই দারুণ যাত্রাটা সুন্দরভাবে শেষ করতে চাই।
আমি জানি, যেটা আমি করতে চাই, সেটা নিয়ে তারাও (ব্রাজিল) আগ্রহী হবে। আমি এসব নিয়ে সেদিন থেকে ভাবব, যেদিন এখান থেকে বিদায় নেব। কারণ, এই ক্লাব এবং ক্লাবের সমর্থকদের আমি সম্মান করি।’ রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হিসেবে দুটি মেয়াদে কাজ করেছেন আনচেলত্তি। এই সময়ে ক্লাবকে জিতিয়েছেন ১৫টি ট্রফি, যার মধ্যে রয়েছে তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। গত মৌসুমে রিয়ালকে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগের ডাবল জিতিয়েছেন তিনি।
অবশ্য চলতি মৌসুমে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তাঁকে। তবে আনচেলত্তি কি বিশ^কাপ পর্যন্ত থাকতে পারবেন ব্রাজিলের কোচ হিসেবে, নাকি চাকরি চলে যাবে? কথাটি বলার জন্যই বলছি বিষয়টি একদম তা না। কোচ হিসেবে নিয়োগের পরপরই মুখ খুলেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট
লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। চীনে সাংবাদিকদের লুলা বলেন, সত্যি বলতে, আমি বিদেশি কোচ হওয়া নিয়ে কিছু বলছি না, তবে আমি মনে করি আমাদের দেশে এমন কোচ রয়েছেন যারা সেলেসাওদের পরিচালনা করার যোগ্য। তবে তার এই মন্তব্যটি ব্যক্তিগত আক্রোশ নাকি দেশীয় কোচের গুরুত্ব বোঝাতে বলেছেন, সেটি নিয়েও বিশ^জুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
তবে কেউ কেউ তাঁর এই মন্তব্যকে আনচেলত্তিকে অপছন্দের কথা বলছেন আবার কেউ ধরে নিচ্ছেন দেশীয় কোচদের সক্ষমতা বোঝাতে লুলা এ কথা বলেছেন। লুলা অতীতেও আনচেলত্তিকে নিয়োগ দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, যা কয়েক বছর ধরেই আলোচনাই ছিল। ২০২৩ সালে লুলা বলেছিলেন, ‘তিনি (আনচেলত্তি) কখনোই ইতালির জাতীয় দলের কোচ ছিলেন না, কেন ইতালির সমস্যাগুলো সমাধান করেন না, যে দল ২০২২ বিশ্বকাপেই কোয়ালিফাই করতে পারেনি?’
তবে ব্রাজিলের হেক্সা মিশনের বা সফল হওয়ার তিনটি কারণ তুলে ধরেছে সংবাদ সংস্থা এএফপি। প্রথম কারণ হিসেবে ঠান্ডা মাথার কোচ বলা হয়েছে আনচেলত্তিকে। দ্বিতীয় কারণ ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ ও তৃতীয় কারণ খেলোয়াড়দের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। এই তিন কারণেই মূলত সফল হতে পারেন ব্রাজিল কোচ আনচেলত্তি।