ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হার না মানা সৈনিক একজন ছলেমা খাতুন

রায়হান হোসেন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০০:৪১, ২১ মে ২০২৫; আপডেট: ০০:৫৯, ২১ মে ২০২৫

হার না মানা সৈনিক একজন ছলেমা খাতুন

দৈনিক জনকণ্ঠ

যে বয়সে নাতী নাতনীদের সাথে খুনসুটি করার কথা ছিল সে বয়সেই সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন চট্টগ্রামের ছলেমা খাতুন। তার ডাক নাম ছলেমা হলেও কাগজে কলমে নাম হলো নুর জাহান বেগম। একজন নারী হয়েও সড়কের ফুটপাতে পুরুষের মতই চা পান বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। তার এই গল্প যেন সিনেমার কাহিনীকেও হার মানায়। তবে অবাক করা বিষয় হলো এই ব্যবসা করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে দুপুরে অভুক্ত থাকেন তিনি। এ যেন জীবন যুদ্ধের এক নিরস্ত্র সৈনিক ৬০ বছর বয়সী এই মহিয়াসী নারী।

ছলেমা খাতুনের বাড়ি নোয়াখালী জেলার মাইজদিতে। তার চার মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েরা সব বড় হলেও ছেলেটি এখনও ছোট। চট্টগ্রাম ওয়াসার মোড়ে দামপাড়া পুলিশ লাইনস্থ পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ের সামনে একটি বাক্স সামনে রেখে সেখানে পান সিগারেট এবং চা বিক্রি করেন তিনি। এই সামান্য উপার্জনেই চলে তার সংসার। পরিবারে উপার্জন করার মত পুরুষ সদস্য না থাকায় এভাবেই জীবনের সাথে যুদ্ধ করে সংসারের খোরাক যোগাতে হয় তাকে। অন্যদিকে এই উপার্জন দিয়েই চার মেয়ের মধ্যে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। ইচ্ছে করলেই ভিক্ষা করতে পারতেন, তবে ভিক্ষা না করে সমাজে মাথা উচু করে বাচতে ইচ্ছুক এই নারী। একটা সময় ভালোই ছিল তার জীবন সংসার। স্বামী কৃষিকাজ করে সংসার চালাত। তবে বিপত্তি বাধে স্বামী অসুস্থ হবার পর। সংসারের খোরাক যোগাতে তাই ছলেমা নিজেই নেমে পড়েন সড়কে। পরবর্তীতে স্বামী মারা গেলে এখন এক মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে নগরের লালখান বাজারে বাসা ভাড়া করে থাকেন তিনি। 

ছলেমা খাতুন বলেন, "আমার স্বামী আগে দেশে কৃষি কাজ করত। হঠাৎ সে অসুস্থ হওয়ায় মেয়েরা আমাদের চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে আসে। সেই থেকে এখানে চা বিক্রি করি। এই ব্যবসা করতে আমাকে সাহায্য করেছে পুলিশ সদস্যরা। তারা টাকা তুলে আমার ব্যবসার পুঁজি জোগাড় করে দিয়েছে। স্বামী দুই বছর অসুস্থ থাকার পর গত করোনাকালীন সময়ে মারা যায়। তার চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে আমার। আমাকে দেখার মত কেউ নাই। চার মেয়ের মধ্যে তিন মেয়েকে আমি ব্যবসা করে বিয়ে দিয়েছি। এখন এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে কোনরকম খেয়ে না খেয়ে আছি। আমার ছেলের বয়স কম। সে এখনো উপার্জন করার মত বয়সের না।"


এদিকে প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে তিন হাজার টাকা বেচাবিক্রি করে ছলেমা খাতুনের লাভ হয় মাত্র দুই থেকে তিনশ টাকা। আর এই সামান্য টাকায় বাসা ভাড়া ও সংসারের যাবতীয় খরচ যোগান তিনি। ছলেমা খাতুনের চার মেয়ে ও এক ছেলে। ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত  বেচাবিক্রি করে ছলেমা খাতুন।

ইকবাল অভি

×