
দৈনিক জনকণ্ঠ
আচ্ছা যদি কেউ বলে 'মৃত্যুর পরেও আমাকে ছেড়ে যাবেনা' রাখতে পারবেন সেই কথা? সবার উত্তর হবে 'হয়তো সম্ভব নয়'। তবে পৃথিবীতে ভালোবাসার জন্যে মানুষ পারেনা এমন কোনো কাজ নেই।
রাজশাহীতে বসবাস করেন শাজাহান মিয়া। সম্রাট শাজাহান তার প্রিয় স্ত্রী মমতাজের জন্য তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন। রাজশাহীর এই শাজাহান হয়তো স্ত্রীর জন্য তাজমহল নির্মাণ করতে পারেননি; কিন্তু হৃদয়ে স্ত্রীর প্রতি গভীর ভালোবাসার যে দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছেন তা যেন সম্রাট শাজাহানের তাজমহলকেও হার মানিয়েছে।
শাজাহান রাজশাহী নগরীর ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মালদা কলোনি এলাকার বাসিন্দা। ১৯৬৯ সালে খায়রুন্নেছাকে বধূ করে ঘরে তুলেছিলেন শাজাহান মিয়া। ২০০৪ সালে হঠাৎ প্রিয়তমা স্ত্রী খায়রুন্নেছা স্ট্রোক করে মারা যান। মুহূর্তের মধ্যে ৩৫ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টেনে প্রিয়তমা স্ত্রী চলে যান না ফেরার দেশে। পরে তাকে দাফন করা হয়েছে নগরীর উপশহর এলাকার পশুহাসপাতালের পাশের গোরস্থানে। তারপর থেকেই ভালোবাসার টানে ২০ বছর ধরে স্ত্রীর কবরের পাশে রাত কাটাচ্ছেন তিনি।
সাধারণত কবরস্থানে কোনো প্রয়োজন ছাড়া কেউই যেতে চায় না। এমনিতেই একটু ভয় অনুভব করে। কিন্তু স্ত্রীর ভালোবাসার টানে সেই করবস্থানকেই নিজের বাসস্থান বানিয়ে ফেলেছেন শাজাহান। শাজাহান পেশায় ছিলেন ট্রাকচালক। এক যুগ আগে সড়ক দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন নিজের বাম পা। এরপরও ক্র্যাচে ভর করে ব্যাটারিচালিত নিজের ছোট্ট অটোরিকশার সাহায্যে বাড়ি থেকে কবরের পাশে যাতায়াত করেন তিনি।
নগরীর মালদা কলোনিতে নিজের বাড়িতে দেখাশোনার কেউ না থাকায় পাশেই মেয়ে কাকলীর বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করেন শাজাহান। অস্থায়ীভাবে থাকেন সেখানেই। তবে ফজরের নামাজ সেরে চলে আসেন গোরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে। দুপুর পর্যন্ত সেখানে থেকে চলে যান মেয়ের বাড়িতে। দুপুরের খাবার সেরে বিকেলে আবার চলে আসেন স্ত্রীর পাশে। গভীর রাত পর্যন্ত স্ত্রীর কবরের পাশে থেকে চলে যান মালদা কলোনির সেই মেয়ের বাসায়। এভাবেই ২০ বছর ধরে জীবন-ধারণ করে আসছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্ত্রীর প্রতি এই অসীম ভালোবাসা থেকেই এমন অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। শাজাহান এবং খায়রুন্নেছার দাম্পত্য জীবন ছিল অত্যন্ত সুন্দর ও মধুর। বিয়ের পর থেকে একটি রাতও আলাদা কাটাননি তারা। স্বামীর সেবা-যত্নে কখনো কোনো ত্রুটি করেননি খায়রুন্নেছা। শাজাহানও সব সময় স্ত্রীকে ভালোবাসা ও সাংসারিক কাজে করেছেন সহযোগিতা।
শাহজাহান মিয়া বলেন, "২০১২ সালে আমি সড়ক দুর্ঘটনায় বাম পা হারিয়েছি। তারপরও কষ্ট হলেও আমি নিজের ছোট্ট ভ্যানে করে আমি কবরে যাতায়াত করি। স্ত্রীর কবরের পাশে থাকতেই আমার ভালো লাগে। তাকে আমি কোনোভাবেই ভুলতে পারি না। আমার শেষ ইচ্ছা, আমার মৃত্যুর পর যেন স্ত্রীর কবরে আমাকে শায়িত করা হয়।"
আরহান মেহেমেদ সায়ান নামে ওই এলাকার এক যুবক বলেন, "উনি কিছু সময় বাহিরে যান খাওয়াদাওয়া করেন তারপর বাকি পুরো সময়টাই স্ত্রীর কবরের পাশেই কাটান।"
একই এলাকার বাসিন্দা নাবিল সরকার বলেন, "উনার মতো মানুষ পৃথিবীতে আর দেখিনি এতটা ভালো কাউকে বাসা যায় তা আগে জানতাম না। উনি সারারাত উনার স্ত্রীর কবরের পাশেই ঘুমান যাতে উনার স্ত্রীর একা না লাগে।"
ইকবাল অভি