ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব উপহার ভাটফুল

আশরাফুল ইসলাম অন্তর, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ০১:২১, ২১ মে ২০২৫

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব উপহার ভাটফুল

দৈনিক জনকণ্ঠ

বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে যাঁরা হৃদয়ে ধারণ করেন, তাঁদের কাছে ভাটফুল একটি চেনা ও ভালোবাসার নাম। রাস্তার পাশে, গ্রামের ঝোপঝাড়ে কিংবা বনবাদাড়ে জন্মানো এই বুনো ফুল যেন প্রকৃতির নিজ হাতে আঁকা এক নিখুঁত সৌন্দর্যচিত্র। অযত্নে বেড়ে উঠলেও তার রূপে ও গন্ধে লুকিয়ে আছে এক অনন্য আবেদন।

ফাল্গুন থেকে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত সময়টা ভাটফুলের ঋতু। এই সময় সারা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এর স্নিগ্ধ সুবাস। বিশেষ করে গ্রামবাংলার পথঘাট, খেতের পাড়, কিংবা গাছগাছালির ফাঁকে চোখে পড়ে এই হলুদাভ সাদা ফুলের ঝাঁক। শহরের ব্যস্ততায় প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই ফুল, তবে গ্রামবাংলায় এখনো জীবন্ত হয়ে আছে তার অস্তিত্ব।

ভাটফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ একাধিক কবিতায় এই ফুলের উল্লেখ করেছেন। গুচ্ছ গুচ্ছ ভাঁটফুলের হাসি যেন তাঁর কবিতার প্রতিটি চরণে প্রাণ ছড়িয়ে দেয়। প্রকৃতি ও প্রেমের গভীর সম্পর্ককে তুলে ধরতে গিয়ে কবি বেছে নিয়েছেন এই বুনো ফুলটিকে, যা আজও পাঠকের হৃদয়ে অমলিন।

তবে শুধু সৌন্দর্যেই নয়, ভাটফুলের রয়েছে ব্যবহারিক গুরুত্বও। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই ফুল ও গাছের ব্যবহার আয়ুর্বেদিক ও স্থানীয় হেরবল চিকিৎসায় দেখা যায়। এছাড়াও, এখনো অনেক মানুষ বিশ্বাস করেন, ভাটফুল শুভ ও মঙ্গলময়। বাড়ির আঙিনায় এই ফুল থাকলে নাকি দুর্ভাগ্য দূর হয়।

তবে, সময়ের সাথে সাথে নগরায়ণ আর বনাঞ্চল ধ্বংসের ফলে ভাটফুলের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো নতুন প্রজন্ম কেবল বইয়ের পাতায় কিংবা কবিতায়ই এই ফুলের নাম পাবে।

প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্যকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সচেতনতা ও সংরক্ষণের মনোভাব। ভাটফুল যেন শুধু কবিতার সৌন্দর্য না থেকে যায়, বরং বাস্তবেও ফিরে পাক তার হারানো গৌরব, এমনটাই প্রত্যাশা প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের।

ভাটফুল আমাদের সংস্কৃতি, প্রকৃতি এবং কাব্যিক ঐতিহ্যের এক অনবদ্য অংশ। এই ফুল শুধু একটি গাছ নয়, এটি আমাদের শিকড়, আমাদের ভালোবাসা, আমাদের বাংলার রূপের স্মারক।

ইকবাল অভি

×