
ছবি: প্রতীকী
ওয়ারিশ হিসেবে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্য সম্পত্তি না পেলে তা কীভাবে আইনি পদ্ধতিতে উদ্ধার করা যায়, সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আমির হামজা লিমন। সম্প্রতি একটি ভিডিও বার্তায় তিনি মুসলিম উত্তরাধিকার আইনের প্রেক্ষাপটে বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে বন্টনযোগ্য সম্পত্তি প্রথমে অংশীদারদের মধ্যে তাদের নির্ধারিত অংশ অনুসারে বণ্টিত হয়। এরপর যদি অবশিষ্ট কিছু থাকে, তা রেসিডুয়ারিদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। অংশীদার বা রেসিডুয়ারি কেউ না থাকলে তখন দূর সম্পর্কীয় আত্মীয়দের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ হয়।
আইনজীবী হামজা লিমন উল্লেখ করেন, উত্তরাধিকার আইনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি রয়েছে। যেমন, মৃত ব্যক্তির সঙ্গে যার মাধ্যমে সম্পর্ক, যদি সে জীবিত থাকে, তবে তার অধীনে থাকা অন্য আত্মীয় ওয়ারিশ হতে পারে না। যেমন, পিতা জীবিত থাকলে ভাই সম্পত্তি পায় না। একইভাবে, একই শ্রেণির উত্তরাধিকারীর ক্ষেত্রে নিকটবর্তীর কারণে দূরবর্তী আত্মীয় বঞ্চিত হয়, যেমন পিতা জীবিত থাকলে দাদা বঞ্চিত হন। তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে, যেমন কন্যা থাকলেও ভাইয়ের ছেলে বঞ্চিত হয় না।
তিনি আরও বলেন, পাঁচ ধরনের উত্তরাধিকারী কোনো অবস্থাতেই সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন না—সন্তান (পুত্র ও কন্যা), পিতা, মাতা, স্বামী ও স্ত্রী। এদেরকে প্রাথমিক উত্তরাধিকারী বলা হয়। এর মধ্যে তিনজনের বিকল্প উত্তরাধিকারী রয়েছে—সন্তানের সন্তান, দাদা এবং দাদী বা নানী। স্বামী ও স্ত্রীর কোনো বিকল্প ওয়ারিশ নেই।
যদি প্রাথমিক উত্তরাধিকারী জীবিত থাকেন, তবে তাদের বিকল্পরা সম্পত্তি পাবে না, তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে। যেমন, যদি পুত্র না থাকে কিন্তু একটি কন্যা ও ছেলের কন্যা থাকে, তাহলে কন্যা পাবে ১/২ অংশ এবং পুত্রের কন্যা পাবে ১/৬ অংশ।
এ ছাড়া, সাধারণভাবে একই স্তরের নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের অর্ধেক অংশ পান। যেমন, কন্যা পুত্রের অর্ধেক অংশ পাবেন। কেউ যদি যার সম্পত্তি বণ্টন হচ্ছে তাকে হত্যা করেন কিংবা ভিন্ন ধর্ম গ্রহণ করেন, তবে সে ব্যক্তি উত্তরাধিকার থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হবেন।
হামজা লিমন উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করেন, কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর সময় যেসব আত্মীয় জীবিত থাকবেন, তারাই উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচিত হবেন। যেমন, কেউ মৃত্যুর সময় পিতা, পিতার পিতা, মাতা, মাতার মাতা, দুই কন্যা ও পুত্রের কন্যাকে রেখে গেলে সম্পত্তির বণ্টন হবে এভাবে—পিতা পাবেন ১/৬ অংশ, মাতা পাবেন ১/৬ অংশ, দুই কন্যা পাবেন ২/৩ অংশ। বাকি আত্মীয়রা কন্যা ও পিতার কারণে বঞ্চিত হবেন।
আরও একটি উদাহরণে, কোনো ব্যক্তি মৃত্যুর সময় পিতা, মাতা, এক কন্যা ও চারজন পুত্রের কন্যাকে রেখে গেলে পিতা ও মাতা প্রত্যেকে ১/৬ অংশ, এক কন্যা পাবে ১/২ অংশ, আর চারজন পুত্রের কন্যা সম্মিলিতভাবে পাবে ১/৬ অংশ (প্রত্যেকে ১/২৪ করে)।
অন্যদিকে, যদি কারও মৃত্যু কালে শুধু পিতা, মাতা ও এক বোন জীবিত থাকেন, তবে সম্পত্তির বণ্টন হবে পিতা ১/৩ ও রেসিডুয়ারি হিসেবে ২/৩ অংশ পাবেন। এক্ষেত্রে বোন সম্পত্তি পাবেন না, কারণ পিতা জীবিত থাকায় তিনি বঞ্চিত হন।
তিনি আরও বলেন, কোনো অবস্থাতেই মৃত ব্যক্তির পিতা, মাতা, স্বামী বা স্ত্রীকে বাদ দেওয়া যাবে না। এদের অংশ আগে নির্ধারণ করে তারপর অন্যদের মাঝে বণ্টন করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ মৃত্যুকালে পিতা, মাতা, স্ত্রী, দুই পুত্র ও দুই কন্যাকে রেখে গেলে পিতা ও মাতা প্রত্যেকে পাবেন ১/৬ অংশ, স্ত্রী পাবেন ১/৮ অংশ এবং অবশিষ্ট অংশ দুই পুত্র ও দুই কন্যার মাঝে বণ্টন হবে, যেখানে প্রত্যেক পুত্র কন্যার দ্বিগুণ অংশ পাবে।
অ্যাডভোকেট হামজা লিমন বলেন, এ ধরনের উত্তরাধিকার জটিলতা নিরসনে আইনজীবীর পরামর্শ গ্রহণ ও প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া উচিত। মুসলিম উত্তরাধিকার আইন পরিষ্কারভাবে বণ্টনের নিয়ম নির্ধারণ করেছে, তাই আইন জানলেই সঠিকভাবে নিজের প্রাপ্য উদ্ধার করা সম্ভব।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=aq1ce-JqbJs
রাকিব