ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ওয়ারিশ সম্পত্তি কি নামজারি করতে হবে? কোন কোন ডকুমেন্টস লাগবে?

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ২১ মে ২০২৫

ওয়ারিশ সম্পত্তি কি নামজারি করতে হবে? কোন কোন ডকুমেন্টস লাগবে?

ছবি: প্রতীকী

অনেকেই মনে করেন, বাবা বা মায়ের মৃত্যুর পর তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তির ওপর সন্তানরা স্বাভাবিকভাবে অধিকার পেয়ে যায় এবং সেই সম্পত্তি ভোগ করলেই যথেষ্ট। কিন্তু বাস্তবতা হলো, শুধুমাত্র ভোগদখল করলেই আইন অনুযায়ী মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় না। সরকারি নথিপত্রে যথাযথভাবে নামজারি না করলে সেই সম্পত্তি এখনো মৃত ব্যক্তির নামে থেকে যায় এবং আইনগতভাবে তা অবিভক্ত সম্পত্তি হিসেবেই বিবেচিত হয়।

একজন ব্যক্তি যখন জীবিত থাকেন, তার স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির একক মালিক তিনিই হন। তার নামে সম্পত্তির দলিল, খতিয়ান, এবং ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়া হয়। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সেই সম্পত্তির মালিক হন তার ওয়ারিশগণ—সন্তান, স্ত্রী, পিতা-মাতা—যদি তারা জীবিত থাকেন। তবে এই উত্তরাধিকারের মাধ্যমে প্রাপ্ত মালিকানা সরকারি রেকর্ডে লিপিবদ্ধ করতে হলে অবশ্যই নামজারি করতে হবে।

নামজারি করার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন হয় ওয়ারিশ কায়েম সনদ, যা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিয়ে থাকেন। এই সনদে কে কে ওয়ারিশ এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক উল্লেখ থাকে। এই সনদ পাওয়ার জন্য মৃত ব্যক্তির মৃত্যু সনদ প্রয়োজন হয়। এরপর ওয়ারিশগণ একত্রে বসে আপোষ বন্টননামা দলিল তৈরি করেন। এই দলিলের মাধ্যমে তারা সিদ্ধান্ত নেন কে কোন অংশ বা দাগের সম্পত্তি কীভাবে ভোগ করবে। একে মৌখিক নয়, লিখিতভাবে দলিল রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রি করতে হয়। এটি একটি আইনগত দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়, যা ভবিষ্যতে বিরোধ এড়াতে কার্যকর প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

এই দলিলের পাশাপাশি জমির পূর্ববর্তী মালিকানার সমস্ত দলিলাদির ফটোকপি, আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন, একটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি এবং একটি রেজিস্ট্রেশনকৃত মোবাইল নম্বর প্রয়োজন হয়। এই মোবাইল নম্বরে ভূমি অফিস থেকে আবেদন সম্পর্কিত এসএমএস পাঠানো হয়, যা প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণে সাহায্য করে।

নামজারির আবেদন অনলাইনে নিজেও করা যায়, যদি আবেদনকারী এসব বিষয়ে দক্ষ হন। অন্যথায় উপজেলা ভূমি অফিসে গিয়ে কম্পিউটার অপারেটরের সাহায্য নিয়ে আবেদন করা যায়।

নামজারি না করলে নানা ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। অবিভক্ত সম্পত্তি থেকে পরবর্তীতে কোনো শরিকের সন্তান এসে দাবি তুলতে পারে, যিনি আগে কিছুই পাননি। এমনকি ভাইয়ের বিক্রি করে যাওয়া অংশে অন্য ভাইয়ের সন্তানরা দাবি জানাতে পারে। এভাবে পরিবারে মামলা-মোকদ্দমা ও দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। এছাড়া নামজারি না করা থাকলে কেউ নিজের অংশের আলাদা খাজনাও দিতে পারে না, ফলে সরকারি নথিতে সম্পত্তির মালিকানা অস্বচ্ছ ও বিতর্কিত রয়ে যায়।

অনেক সময় দেখা যায়, ৩০-৪০ বছর আগে বাবা-মা মারা গেছেন, কিন্তু আজও সন্তানেরা কেবল মৌখিকভাবে সম্পত্তি ভোগ করছেন। তারা চাইলে এখনো আপোষ বন্টননামা দলিল করে নিতে পারেন এবং নিয়ম অনুযায়ী নামজারি করে নিজের নামে সম্পত্তি লিপিবদ্ধ করতে পারেন। এটি তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্থায়ী দলিল হিসেবে কাজ করবে এবং জমি নিয়ে আর কোনো বিভ্রান্তি বা বিরোধ থাকবে না।

 

সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=Cfn8ek6jxZI

রাকিব

×