ছবি: প্রতীকী
জমির মালিকানা ও ভোগদখল নিয়ে নানা ধরনের জটিলতা ও বিরোধ আমাদের দেশে একটি সাধারণ ঘটনা। কিন্তু মাত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ আপনার কাছে থাকলেই কেউ আপনাকে সেই জমি থেকে উচ্ছেদ করতে পারবে না— এমনই দাবি বিশিষ্ট আইনজীবী সেলিম রেজার।
একটি ভিডিও বার্তায় তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বলেন, জমির মালিকানার ক্ষেত্রে "সর্বশেষ রেকর্ড খতিয়ানে" যদি আপনার নাম থেকে থাকে, তাহলে আপনি সেই সম্পত্তির বৈধ মালিক হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং কেউ আপনাকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করতে পারবে না।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী রেকর্ড হালনাগাদ করা হয়ে থাকে— যেমন বিএস (বাংলাদেশ জরিপ), বিআরএস, আরএস, সিটি জরিপ ইত্যাদি। যেই জরিপটি সর্বশেষ হয়েছে, সেই জরিপ অনুযায়ী যদি খতিয়ানে আপনার নাম থাকে, তবে সেটিই আপনার মালিকানার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ।’
সেলিম রেজা আরও জানান, ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে পূর্বপুরুষদের নাম সর্বশেষ রেকর্ডে থাকতে হবে, এবং পরবর্তী পর্যায়ে ওয়ারিশদের নামজারি করে রেকর্ড সংশোধন করতে হবে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, শুধুমাত্র রেকর্ড খতিয়ান থাকলেই হবে না— যদি একাধিক ওয়ারিশ থাকেন, তাহলে বাটোয়ারা দলিল (বন্টন দলিল) থাকা জরুরি। তা না হলে পরবর্তীতে ওয়ারিশদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিতে পারে।
ক্রয় সূত্রে মালিকানা লাভের ক্ষেত্রেও সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন এই আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘আপনি যে ব্যক্তির কাছ থেকে জমি ক্রয় করছেন, তার নামে সর্বশেষ রেকর্ড আছে কিনা এবং সেই ব্যক্তি কিভাবে জমির মালিক হয়েছেন— এই সম্পূর্ণ চেইন অব মালিকানা যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। না হলে আপনি প্রতারণার শিকার হতে পারেন।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, যদি জমি সংক্রান্ত কোন মামলা আপনার পক্ষে নিষ্পত্তি হয় এবং আদালতের রায় বা ডিক্রি আপনার পক্ষে থাকে, তাহলে সেটিও জমির মালিকানার একটি বৈধ ও শক্তিশালী দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে।
সারসংক্ষেপে, চারটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল জমির মালিকানা রক্ষায় প্রধান অস্ত্র হিসেবে কাজ করে:
১. সর্বশেষ রেকর্ড খতিয়ানে নাম থাকা।
২. ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে বাটোয়ারা দলিল।
৩. বৈধ মালিকের কাছ থেকে ক্রয়কৃত দলিল ও মালিকানা চেইনের সঠিকতা।
৪. আদালতের রায় বা ডিক্রি, যদি তা আপনার পক্ষে থাকে।
আইনজীবী সেলিম রেজার মতে, এই চারটি দলিলের যেকোনো একটি যথাযথভাবে থাকলে, কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী আপনার জমি থেকে আপনাকে উচ্ছেদ করতে পারবে না, এমনকি আদালতের দ্বারস্থ হলেও তাদের পক্ষে রায় পাওয়া সম্ভব হবে না।
তিনি সবাইকে পরামর্শ দেন, জমি সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে সন্দেহ বা জটিলতা থাকলে অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ গ্রহণ করতে।
রাকিব
