
ছবি: সংগৃহীত।
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের একটি আশ্রয়ন প্রকল্পে ভুমিহীনদের ঘর মিললেও মেলেনি নুন্যতম সুযোগ সুবিধা। আশ্রয়ণে-নেই-বিদ্যুৎ-নষ্ট-টিউবওয়েল ও টয়লেট। বিদ্যুতের খুঁটি থাকলেও একবছরেও সংযোগের ব্যবস্থা হয়নি। হাতপাখা আর কুপির আলোই বাসিন্দাদের ভরসা। কাঠফাটা গরমে এখানকার মানুষের কষ্ট সীমাহীন। হাতপাখা আর কুপির আলো তাদের ভরসা। সন্ধ্যায় এলাকায় ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়। আর উপজেলা প্রশাসনের দাবি প্রকল্পে বসবাসকারী ভূমি হিন্দের সুবিধার্থে সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলার ধামাইনগর ইউনিয়নের মেছোবাড়ি গ্রামে ২০টি পরিবারের জন্য ৪টি ব্যারাকের একটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে উদ্ধোধন হয় গত দুবছর আগে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকল্পের কাজ শেষ করে উপজেলা প্রশাসনের নিকট হস্তান্তর করেন। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন নিম্নআয়ের এসব পরিবারকে দেয়া হয় ঘর। শুরুটা ভালো হলেও তাদের কষ্টের শেষ নেই। আশ্রয়ন প্রকল্পের চারপাশে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা জনমানবশুন্য। কর্মহীন মানুষ কর্ম না পেয়ে কিছুদিন পরে তারা চোখেমুখে অন্ধকার দেখতে থাকে। মাথা গোঁজার জায়গা পেয়ে খুশি হলেও অনেকেই ঘর ছেড়ে চলে যায় তাদের সুবিধামতো স্থানে। বেশকিছু দিন ব্যারাকে মানুষ না থাকায় ব্যারাকের অনেক কিছু নষ্ট হয়ে যায়। নষ্ট হয়ে যায় সবগুলো ল্যাট্রিন। গত একবছরেও দেওয়া হয়নি বিদ্যুৎ সংযোগ। নেই সুপিয় পানির ব্যবস্থা। এতে করে দিন দিন বাড়ছে তাদের ভোগান্তি।ব্যারাকে বসবাসকারী রুনা খাতুন ও তার স্বামী সাগর জানান,তাদের পৈত্রিক বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাঠেরপুল এলাকায়। নিজের বসত বাড়ী না থাকায় বেশ কিছুদিন যাবৎ ধামাইনগর গ্রামের নওপা গ্রামে অন্যের বাড়িতে বসবাস করতেন। গত তিনমাস পুর্বে আমরা এই আশ্রায়নে এসে বসবাস করছি। তারা জানান, এখানে এসে মহাবিপদে পড়েছি। চারদিকে কোন বসতবাড়ি নেই। সন্ধার পরে ঘোর অন্ধকার নেমে আসে। রাত যতই গভীর হয় ততই বুকের ভিতরে একধরনের কাপুনি দেখা দেয়।রুবিয়া খাতুন জানান, বিদ্যুৎ নেই রাস্তা নেই। কারো কোন অসুখ বা অসুস্থা দেখা দিলে বিনা চিকিৎসা মারা যেতে হবে। একটি ভ্যান চলেনা। পায়ে হেটে প্রায় তিন কিলোমিটার দুরে গিয়ে বাজার ঘাট আনতে হয়। আশ্রায়নে বসবাসকারী আব্দুর রশিদ জানান,তিনি প্রথম থেকেই এখানে বসবাস করছেন। পানির ব্যবস্থা ছিলোনা। নিজেই একটি টিউবওয়েল বসিয়ে নিয়েছেন। এখান থেকেই সবাই পানি ব্যবহার করছনে। এখানেই বসবাস করেন ছাবিনা নামের এক বিধবা। তিনি ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি বলেন, সরকারি কোন সহযোগীতা তাদের কপালে আসেনা। ঈদের মধ্যে সরকার চাল দিয়ে থাকে। কিন্ত তাদের ভাগ্যে কোনদিন কিছু মেলেনা।উত্তর ফরিদপুর গ্রামের উজ্জল মাহাতো জানান, আশ্রায়ন প্রকল্পটি একেবারেই ফাঁকা স্থানে করা হয়েছে। উত্তর ফরিদপুর চারমাথা থেকে মেছোবাড়ী আশ্রয়ন প্রকল্পটি প্রায় এক কিলোমিটার দুরুত্বে। রাস্তাটির অবস্থাও বেহাল। কোন যানবাহন চলাচল করেনা। এমনকি একটি ভ্যানও চলেনা। পায়ে হেটে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। সেখানে মানুষ বসবাস করার মতো পরিস্থিতি নেই। সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে আশ্রয়ন প্রকল্প করে টাকার অপচয় করেছে। ধামাইনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান,রাইসুল হাসান সুমন জানান, আশ্রয়ন-২ প্রকল্প থেকে রাস্তা করে দেওয়ার কথা ছিল। জড়িপও হয়েছে। আর বিদ্যুতের কাজ চলছে । খুব তাড়াতাড়ি সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে আশা করা হচ্ছে।
রায়গঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ রাশেদুল ইসলাম জানান, প্রকল্পস্থান পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আশ্রয়ন প্রকল্পের যাবতীয় সমস্যাদি পুরুনে এবং বসবাসকারীদের সকল সমস্যা সমাধানে তার অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে। রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ হুমায়ুন কবির জানান , উপজেলা পরিষদের আগামী রাজস্ব মিটিং বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্ল্যেখ্য যে এখানে ২০টি পরিবারের মধ্যে বর্তমানে ৮টি পরবিার বসবাস করছেন। অবশিষ্ট ১২টি পরিবার ঘরে তালা দিয়ে অন্যত্র চলে গেছে।
নুসরাত