
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে তামাকপণ্যের মূল্য ও কর বৃদ্ধি এবং তামাক করনীতি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন ডর্প, গণমাধ্যমকর্মীসহ সামাজিক বিশিষ্ট নেতৃস্থানীয় ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ব্যক্তিরা।
বুধবার (২১ মে) সিরডাপ মিলনায়তনে ‘আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে তামাকপণ্যের মূল্য ও কর বৃদ্ধি এবং তামাক করনীতি সংস্কার’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এ দাবি জানান তারা।
ডর্প-এর প্রতিষ্ঠাতা এইচএম নোমানের সভাপতিত্বে জাতীয় সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ আখতারুজ্জামান (যুগ্মসচিব), মহাপরিচালক, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল; হোসেইন আলী খন্দকার, সাবেক অতিরিক্ত সচিব, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ; আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুন্সী আলাউদ্দীন আল আজাদ (অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব), বিডিআর তদন্ত কমিশনের সদস্য। এছাড়াও সামাজিক বিশিষ্ট নেতৃস্থানীয় প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একীভূত করে প্রতি ১০ শলাকার সিগারেটের প্যাকেটের সর্বনিম্ন খুচরা মূল্য ৯০ টাকা করার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরের দাম কাছাকাছি হওয়ায় দাম বাড়লেও মধ্যম থেকে নিম্ন স্তরের সিগারেটে স্থানান্তরের প্রবণতা বাড়ে, তবে দুই স্তরকে একীভূত করে দাম বাড়ালে ধূমপানের প্রবণতা কমবে। এতে করে তরুণরা ধূমপানে নিরুৎসাহিত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লক্ষ তরুণের তামাকজনিত অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
মূল প্রবন্ধে মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান, উপ নির্বাহী পরিচালক, ডর্প আসন্ন বাজেটে তামাকপণ্যের মূল্য ও কর বৃদ্ধি সংক্রান্ত প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরে বলেন, নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্র করে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করা, উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৯০ টাকা নির্ধারণ করা এবং সিগারেটের খুচরা মূল্যের ওপর ৬৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখতে হবে।
এছাড়া ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার দাবিও জানানো হয়। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা উচিত। এছাড়া সব তামাক পণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখার দাবিও জানানো হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোঃ আখতারউজ-জামান (যুগ্মসচিব), মহাপরিচালক, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল বলেন, সিগারেটে চারটি মূল্যস্তর (নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম) থাকায় তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছে না। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম খুবই কাছাকাছি। এ কারণে ভোক্তারা যেকোনো একটি স্তরের সিগারেট বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্র করে দাম বাড়ানো হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং তরুণ প্রজন্ম ধূমপানে নিরুৎসাহিত হবে।
মুন্সী আলাউদ্দীন আল আজাদ (অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব), বিডিআর তদন্ত কমিশনের সদস্য বলেন, উপরোক্ত প্রস্তাবনা অনুযায়ী আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে তামাকপণ্যের বিদ্যমান কর ব্যবস্থা সংস্কার করলে সিগারেটের ব্যবহার ১৫.১ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ১৩.০৩ শতাংশ হবে। প্রায় ২৪ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে এবং প্রায় ১৭ লক্ষ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। দীর্ঘমেয়াদে ৮ লক্ষ ৬৪ হাজার ৭৫৮ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৮ লক্ষ ৬৯ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠির অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়াও প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় হবে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি।
রিফাত