
বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিল ও এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি
বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিল ও চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানকে অপসারণসহ চার দাবিতে অসহযোগসহ পাঁচ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড- এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় রাজস্ব ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর কর্মকর্তারা বলেন, গত ১২ মে অত্যন্ত গোপনে এবং প্রত্যাশিত সংস্থাসমূহ, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনকে অজ্ঞাত রেখে এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ গঠনের উদ্দেশে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। এরপর অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে গত ১৪ মে থেকে আমরা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছি।
জারিকৃত অধ্যাদেশ বাতিলসহ তিনটি দাবি গত ১৪-১৫, ১৭-১৯ মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে আংশিক কলমবিরতি পালন করা হয়। পরবর্তীতে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে সভা অনুষ্ঠানের পরিপ্রেক্ষিতে ২০ মে কোনো কর্মসূচি রাখা হয়নি।
গত মঙ্গলবার অর্থ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আরও দুজন উপদেষ্টা যথাক্রমে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটির সদস্যবৃন্দ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তিনজন প্রাক্তন সদস্য, অর্থ বিভাগের সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান।
সভায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয় যে, এনবিআরের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সংস্কারের পক্ষে এবং তারা চান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পূর্ণাঙ্গ, টেকসই ও কার্যকরভাবে সংস্কার করা হোক। পরিষদের পক্ষ থেকে দৃঢ়ভাবে বলা হয়, এনবিআরকে অক্ষুণœ রেখে তাকে আরও শক্তিশালী, আধুনিক ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করাই হবে দেশের জন্য কল্যাণকর।
তারা বলেন, আমরা আশা করেছিলাম যে, পরামর্শক কমিটির সদস্যদের বক্তব্যের ধারাবাহিকতা দুজন উপদেষ্টার বক্তব্যের মধ্যে পাব। কিন্তু পরিতাপের সঙ্গে আমরা জানাচ্ছি যে, তারা জারিকৃত অধ্যাদেশের পক্ষে কথা বলেন এবং অধ্যাদেশটি ভালো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। কোনোটি সঠিক, কোনোটি আন্তর্জাতিক মানদ-ে গ্রহণযোগ্য, কোনোটি দেশের জন্য সর্বোত্তম হবে, সে বিষয়ে তারা কিছু বলেননি।
সবশেষে সভায় অর্থ উপদেষ্টা জানান যে, বাস্তবায়ন পর্যায়ে আমাদের কনসার্ন অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করবেন। মিটিং শেষে অর্থ উপদেষ্টা মহোদয় একটা বিবৃতি মিডিয়ার কাছে দিয়েছেন। তার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, দেশের স্বার্থে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দশের স্বার্থে যে অধ্যাদেশ অনুমোদন হয়েছে তা থাকবে, তবে আমাদের যে জিনিসগুলো আছে তা উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে বিধি বা অন্য কিছু করে অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করা হবে।
এ বিষয়ে আর কোনো আলোচনা নয় বলে তিনি জানিয়েছেন। আমাদের আন্দোলন চলবে কী চলবে না, সে বিষয়ে কিছু আসে যায় না মর্মে তিনি পরিষদকে মন্তব্য করেছেন। জুলাই বিপ্লব ফ্যাসিবাদ উত্তর যুগে মিটিংয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরা বক্তব্য ও সভা শেষে মিডিয়ায় প্রদত্ত বক্তব্য আমাদেরকে মারাত্মকভাবে আহত করেছে।
এতে প্রতীয়মান হয় যে, আমাদের এই নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির ব্যাপকতা ও যৌক্তিকতার বিষয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঠিক তথ্য প্রদান না করে বরং প্রকৃত তথ্য আড়াল করেছেন, যা পরিস্থিতিকে আজকের অবস্থানে উপনীত করেছে।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবিগুলো হলো: ১. জারিকৃত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে; ২. অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে; ৩. রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে এবং ৪. জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রস্তাবিত খসড়া এবং পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আলোচনা-পর্যালোচনা করে প্রত্যাশী সংস্থাসমূহ, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি পাঁচ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। সেগুলো হলো: ১. ২১ মে থেকে এনবিআরের চেয়ারম্যান পদত্যাগের দাবিতে লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচি পালন করা হবে; ২. বৃহস্পতিবার দুপুরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হবে; ৩. একই দিনে এনবিআর এবং ঢাকা ও ঢাকার বাইরে স্ব-স্ব দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
তবে রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এর আওতামুক্ত থাকবে; ৪. আগামী ২৪-২৫ মে কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশনসমূহ ব্যতীত ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে। এই দুই দিন কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশনসমূহে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। তবে রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে এবং ৫. আগামী ২৬ মে থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে।